ধীরেন দাস

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

ধীরেন দাস: নজরুলগীতির অমূল্য সম্পদ

ধীরেন্দ্রনাথ দাস, অথবা তাঁর অধিক পরিচিত নাম ধীরেন দাস (৮ আগস্ট ১৯০৩ - ২৫ নভেম্বর ১৯৬১), ছিলেন একজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী ও সুরকার। নজরুলগীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার হিসেবে তিনি সর্বজনবিদিত। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সঙ্গীত প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে 'শ্রুতিধর' এবং 'তার গানের গান্ধারী' বলে ডাকতেন।

১৯০৩ সালের ৮ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ায় মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা কালীচরণ দাস রাণীগঞ্জের বেঙ্গল কোল কোম্পানির নায়েব ছিলেন। ধীরেনের বাল্যকাল থেকেই অভিনয় ও সঙ্গীতে প্রবল আগ্রহ ছিল। মাতা ছিলেন প্রভাবতী দেবী। কলকাতার পাইকপাড়ার শ্রীকৃষ্ণ পাঠশালায় তিনি বাল্যশিক্ষা শুরু করেন এবং প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময় কলেজের অধ্যাপক শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সান্নিধ্যে আসেন।

ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের 'রঘুবীর' নাটকে শিশিরকুমারের সাথে শ্যামলী চরিত্রে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন। পিতার উৎসাহে তিনি বিজয়া দেবীকে বিয়ে করেন। পিতার মৃত্যুর পর লয়েডস্ ব্যাঙ্কে চাকরি নেন। তবে, পেশাদারী মঞ্চে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহে ১৯২৬ সালে ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে শিশিরকুমারের সাথে যুক্ত হন। এই সময়ে রাধিকা গোস্বামী, সাতকড়ি মালাকার, জ্যোতিষপ্রসাদ প্রমুখের কাছে গান শেখেন।

পরে এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানিতে যশস্বী সুরকার ভূতনাথ দাসের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইচএমভিই তখন তাঁর প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এখানেই কৃষ্ণচন্দ্র দে, জমিরুদ্দিন খাঁ প্রমুখের কাছ থেকে তালিম লাভ করেন। ১৯২৭ সালে 'মন্দিরে একা বসে' এবং 'কোন বেনীতে ব্রজের কানু স্থান পেলো' গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড (p 8732) এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯২৮ সালে আরও চারটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে 'আমার সোনার বাংলা কাঙাল কিসে' ও 'কোন দেশেতে তরুলতা' বেশ জনপ্রিয় হয়।

১৯২৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম এইচএমভিতে যোগ দিলে তাদের মধ্যে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরেনের গান মনে রাখার অসাধারণ ক্ষমতায় নজরুল মুগ্ধ হন। নজরুল যে গান শিখিয়ে দিতেন, ধীরেন সেগুলো অন্য শিল্পীদের শিখিয়ে দিতেন। কবির আন্তরিক ইচ্ছায় ধীরেনই প্রথম নজরুলের গানে সুর দেন। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন রবীন্দ্রনাথের গানের ভাণ্ডারী ছিলেন, তেমনি ধীরেন দাস ছিলেন নজরুলের গানের ভাণ্ডারী। ধীরেনের সুরে নজরুলের 'কালো মেয়ের পায়ের তলায়' ও 'আর লুকাবি কোথায় মা কালি' গান দুটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। ১৯৩২ সালে মৃণালকান্তি ঘোষের কণ্ঠে গাওয়া এই দুটি গান অত্যন্ত সমাদৃত হয়।

নজরুলগীতি ছাড়াও, ধীরেন দাস রাগপ্রধান, গজল, ভাটিয়ালি, বাউল, রবীন্দ্রসংগীত, অতুলপ্রসাদী, দ্বিজেন্দ্রগীতি ইত্যাদি রেকর্ড করেছেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড করেছিলেন অনাদি ঘোষদস্তিদারের প্রশিক্ষণে। তিনি পাঁচশোর বেশি গানের রেকর্ড করেছেন। ১৯৪৬-৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্টার থিয়েটারে কিছু নাটকে সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং অভিনয় করেছেন। নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং চলচ্চিত্রে সুর দিয়েছেন। পঞ্চাশের দশকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকরঞ্জন শাখার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং 'শিল্পায়ন' নামে একটি নাট্যসংস্থা গঠন করেন।

ধীরেন্দ্রনাথ দাস ও বিজয়া দেবীর সাত পুত্র ও পাঁচ কন্যা সহ পরিবারের সকলেই ছিলেন সঙ্গীতে নিবেদিতপ্রাণ এবং বাংলার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। তাদের মধ্যম পুত্র ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট অভিনেতা অনুপ কুমার। আর অনুপ কুমারের জামাইবাবু ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন।

ধীরেন দাস ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন। তাঁর অবদান বাংলা সংগীতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ধীরেন দাস ছিলেন একজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী ও সুরকার।
  • তিনি নজরুলগীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার ছিলেন।
  • কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে ‘শ্রুতিধর’ ও ‘গানের গান্ধারী’ বলে ডাকতেন।
  • তিনি ৫০০ এরও বেশি গানের রেকর্ড করেছেন।
  • তাঁর মধ্যম পুত্র ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা অনুপ কুমার।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - ধীরেন দাস

ধীরেন দাস লাল স্কচটেপে মোড়ানো বস্তুতে লাথি মেরেছিলেন যার ফলে বিস্ফোরণ ঘটে।