দিরাই উপজেলা: সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল দিরাই। কালনী ও সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলাটি ৪২০.৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও সমৃদ্ধ।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
প্রাচীনকালে দিরাই 'বাবাগঞ্জ বাজার' নামে পরিচিত ছিল। জিতরাম ও দ্বিদরাম নামক দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির নামানুসারে এটি 'দিরাই বাজার' নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৯২ সালের ১০ ডিসেম্বর আসাম গেজেট নোটিফিকেশন নং-৫৯৫৪ এর মাধ্যমে দিরাই নামকরণ করা হয়। ১৯৩৮ সালে নানকার বিদ্রোহের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই অঞ্চল। ১৯৪২ সালে দিরাই থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮২ সালে তা উপজেলায় উন্নীত হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ ও আহত হয়েছিলেন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ:
দিরাই উপজেলা ২৪°৩৯' থেকে ২৪°৫৩' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১০' থেকে ৯১°২৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি ১টি পৌরসভা এবং ৯টি ইউনিয়নে বিভক্ত। রফিনগর ইউনিয়ন আয়তনের দিক থেকে বৃহত্তম। দিরাই উপজেলার উত্তরে শান্তিগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে শাল্লা উপজেলা, বানিয়াচং এবং নবীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে জগন্নাথপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে শাল্লা, খালিয়াজুড়ি ও জামালগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দিরাইয়ের জনসংখ্যা প্রায় ২৪৩,৬৯০। কৃষিকাজ এখানকার প্রধান পেশা। ধান, আলু, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল ও ফল। মাছের চাষ ও ব্যবসাও উল্লেখযোগ্য। দিরাইতে বেশ কিছু বাজার, রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, এবং অন্যান্য কলকারখানা রয়েছে।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
দিরাইয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। ফুটবল, ক্রিকেট, যাত্রা, নাটক, বাউল গান ইত্যাদি বিনোদন জনপ্রিয়। ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, মাযার ইত্যাদি ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
দিরাইয়ে ডিগ্রি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি সুবিধা আছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
দিরাই উপজেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সংবেদনশীল অঞ্চল। বন্যা ও সুনামি এখানে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
উপসংহার:
দিরাই একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপজেলা। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের সম্ভাবনা এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে তুলেছে।