গত জুন মাসে বাংলাদেশের লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দাবি, কোনও হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেনি; বরং একটি সরকারি ওয়েবসাইটের কারিগরি দুর্বলতার কারণে এমনটি ঘটেছে। ওই ওয়েবসাইটের নাম তিনি প্রকাশ করেননি। তবে, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেই এই তথ্য ফাঁস হয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সিআইআরটি) এর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান জানিয়েছেন, একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে তাঁরা নিশ্চিত। তবে কত নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয়েছে, সে বিষয়ে সিআইআরটি এখনও নিশ্চিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মার্কোপাওলোস জানিয়েছেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ নাগরিকের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। তিনি ২৭ জুন প্রথম এই তথ্য লক্ষ্য করেন এবং এরপর বাংলাদেশ সরকারের সিআইআরটির সাথে যোগাযোগ করেন।
মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তির অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ এই তথ্য ফাঁসের সত্যতা যাচাই করেছে। তাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারি ওয়েবসাইটের 'পাবলিক সার্চ টুল' ব্যবহার করে ফাঁস হওয়া ডেটাবেসের অন্যান্য তথ্যও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, কয়েক লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে কারিগরি দুর্বলতার কারণে, কোনও হ্যাকিং হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য ফাঁসের ফলে নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধে এই তথ্য ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতার কথা স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, গত বছরের অক্টোবরে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, দুঃখজনকভাবে অনেকেই নির্দেশনা অনুসরণ করছে না।
এই ঘটনার পর সরকার তদন্ত শুরু করেছে এবং তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এ ধরনের তথ্য ফাঁসের পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আরও তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে এই প্রতিবেদন আপডেট করে দেব।