টিকাদান: একটি বিস্তারিত আলোচনা
টিকাদান হলো একটি প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা যা কোনও রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা (প্রতিরোধ ক্ষমতা) অর্জনে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্রকে সাহায্য করে। টিকায় দুর্বল, জীবন্ত অথবা মৃত অবস্থায় বিদ্যমান অণুজীব বা ভাইরাস, কিংবা ঐ অণুজীব থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন বা বিষাক্ত পদার্থ থাকে। টিকা দেহের অভিযোজিত অনাক্রম্যতাকে উদ্দীপ্ত করে সংক্রামক রোগ থেকে অসুস্থতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। যখন জনসংখ্যার একটি যথেষ্ট বড় অংশ টিকাদান করে, তখন ‘যূথ অনাক্রম্যতা’ অর্জিত হয়, যা দুর্বল-অনাক্রম্যতাবিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও সুরক্ষা দেয়।
টিকাদানের ইতিহাস:
প্রথম টিকাদানের প্রচেষ্টা সম্ভবত গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। ১৬শ শতকে চীনে গুটিবসন্তের ‘বীজরোপণ’ (variolation) পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। ১৭৯৬ সালে ইংরেজ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার গুটিবসন্তের টিকা উদ্ভাবন করেন। লুই পাস্তুর অণুজীববিজ্ঞানে গবেষণার মাধ্যমে এই ধারণাটির আরও বিকাশ ঘটে। গুটিবসন্ত একটি ছোঁয়াচে ও মরণঘাতী রোগ ছিল, যা ১৯৭৯ সালে টিকাদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নির্মূল করা সম্ভব হয়।
টিকাদান ও এর প্রভাব:
টিকাদানের কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে গবেষণা ও যাচাইকৃত। টিকাদান সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। টিকাদানের কারণে পোলিও ও ধনুষ্টংকারের মতো রোগ অনেক এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। তবে টিকাদানের হার কমলে উচ্ছেদকৃত রোগের প্রাদুর্ভাব ফিরে আসতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে টিকাদান প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৫০ লক্ষ অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করে।
টিকাদানের ধরণ ও প্রক্রিয়া:
বেশিরভাগ টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিছু টিকা, যেমন পোলিও টিকা, মৌখিকভাবে দেওয়া হয়। টিকার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা বিকাশ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। টিকা ব্যর্থতার কারণ হিসেবে রোগীর স্বতন্ত্র ইমিউন প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তনকে ধরা হয়।
টিকাদানের বিরুদ্ধে মতামত:
টিকাদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক, নৈতিক, রাজনৈতিক, চিকিৎসাগত নিরাপত্তা ও ধর্মীয় ভিত্তিতে কিছু অনীহা প্রদর্শিত হলেও, কোন প্রধান ধর্মেই টিকাদানের বিরোধিতা করা হয় না।
টিকাদান কর্মসূচি:
বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশেও ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’ (EPI) রয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। এই কর্মসূচির অধীনে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান করা হয়।
উপসংহার:
টিকাদান হলো জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ও অকাল মৃত্যু হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরো বিস্তারিত জানার জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।