জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি উত্তরে দিনাজপুর, দক্ষিণে বগুড়া ও নওগাঁ, পূর্বে বগুড়া ও গাইবান্ধা এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। জেলার মোট আয়তন ৯৬৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত জয়পুরহাটের ইতিহাস স্পষ্ট নয়। দীর্ঘকাল এটি গৌড়ের পাল ও সেন রাজাদের অধীনে ছিল। পূর্বে চাকলা ঘোড়াঘাট এবং পরবর্তীতে দিনাজপুর জেলার অংশ হিসেবে জয়পুরহাট পরিচিত ছিল। বর্তমান জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি উপজেলার গ্রাম নিয়ে একসময় লালবাজার থানা গঠিত হয়েছিল, যা যমুনা নদীর তীরে করিমনগরে অবস্থিত ছিল। পরবর্তীতে রেলপথের উন্নয়নের সাথে সাথে জয়পুরহাট রেলস্টেশন ও পোস্ট অফিসের নামকরণের ফলে এ নামটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৭১ সালে জয়পুরহাট মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়পুরহাট ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা হিলির মুহাড়াপাড়া যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাকিস্তানি সেনাদের কর্তৃক অনেক নিরীহ মানুষ নিহত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যাগত তথ্য:
জয়পুরহাট জেলা ৫টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা, ৩২টি ইউনিয়ন, ৯৮৮টি গ্রাম এবং ৭৬২টি মৌজায় বিভক্ত। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৯৫৬,৪৩১ জন।
অর্থনীতি:
জয়পুরহাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, আলু, ইক্ষু, লতিরাজ, কলা, মাল্টা জেলার প্রধান ফসল। জয়পুরহাট চিনিকল বাংলাদেশের বৃহৎ চিনিকল হিসেবে পরিচিত। জামালগঞ্জ কয়লা খনি এছাড়াও জামালগঞ্জ এলাকায় চুনাপাথরের বিশাল মজুদ আছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা:
জয়পুরহাট জেলার শিক্ষার হার ৬১.৮৬%। জেলায় ৬ টি সরকারি এবং ৩৯ টি বেসরকারি কলেজ, ১টি মহিলা ক্যাডেট কলেজ, ১৬৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
জয়পুরহাটে ৩৪২.৫৯ কিমি পাকা রাস্তা, ৬১.৯৫ কিমি আধাপাকা রাস্তা এবং ১৫৯৬ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন জেলার রেল যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজে জয়পুরহাটে যাওয়া যায়।