জাঞ্জিবার

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৫:৫৫ এএম
নামান্তরে:
জানজিবার
Zanzibar
জাঞ্জিবার

জাঞ্জিবার: মশলার দ্বীপ, ইতিহাসের সাক্ষী

পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়ার উপকূল থেকে ২৫-৫০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত জাঞ্জিবার, একটি স্বশাসিত দ্বীপ অঞ্চল। জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত এই অঞ্চলে উনগুজা (যা অনানুষ্ঠানিকভাবে জাঞ্জিবার দ্বীপ নামে পরিচিত) এবং পেম্বা- এই দুটি প্রধান দ্বীপ ছাড়াও আরও অনেক ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। উনগুজায় অবস্থিত জাঞ্জিবার শহর, অঞ্চলটির রাজধানী। এর ঐতিহাসিক কেন্দ্র স্টোন টাউন ২০০০ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পেয়েছে। এখানকার স্থাপত্যে আফ্রিকা, আরব, পারস্য, ভারত ও ইউরোপের মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।

জাঞ্জিবারের অর্থনীতি মূলত মশলা, রাফিয়া পাম এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ১৯শ শতক থেকেই এখানে লবঙ্গ, দারুচিনি, জায়ফল, আদা ও কালো গোলমরিচের চাষ হয়ে আসছে। পেম্বা দ্বীপ বিশ্বের বৃহত্তম লবঙ্গ উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জ এবং তানজানিয়ার মাফিয়া দ্বীপকে একত্রে 'মশলার দ্বীপপুঞ্জ' বলা হয়। সুন্দর বালুকাময় সৈকত এবং প্রবাল প্রাচীরের জন্য জাঞ্জিবার বিখ্যাত। গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এখানকার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। পর্যটন খাত সাম্প্রতিককালে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৯৮৫ সালের ১৯ হাজার থেকে ২০১৬ সালে ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার পর্যটক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচটি সমুদ্র বন্দর এবং আবেইদ আমানি কারুমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর জাঞ্জিবারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে তুলেছে।

জাঞ্জিবারের সামুদ্রিক ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মৎস্য ও শৈবাল চাষের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাঞ্জিবারের লাল কলোবাস বানর, সার্ভালিন জেনেট, এবং বিরল বা বিলুপ্তপ্রায় চিতাবাঘ জাঞ্জিবারের জীববৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য দিক। তবে পর্যটন ও মৎস্য খাতের চাপ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পরিবেশগত উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে জাঞ্জিবারে আফ্রিকান, আফ্রিকান-পারস্য মিশ্র (শিরাজি), আরব এবং এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করে। সোয়াহিলি ভাষা এখানকার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। মাছ, নারকেল, ভাত, কাসাভা এবং মিষ্টি আলু এখানকার প্রধান খাদ্য।

জাঞ্জিবারের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। আদি অধিবাসীরা আফ্রিকা থেকে এসেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ভারত, লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগরের দেশগুলির সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১০ম শতকে পারস্য থেকে, বিশেষ করে শিরাজ থেকে লোক আসতে শুরু করে। আরব ও পারস্যরা দাস, হাতির দাঁত এবং মশলা ব্যবসায় জড়িত ছিল। ১৫শ থেকে ১৬শ শতকে প্রায় দুই শতাব্দী পর্তুগিজদের শাসন ছিল। ১৬৯৮ সালে ওমানের আরবরা জাঞ্জিবার জয় করে। ১৮৩২ সালে ওমানের সুলতান তাঁর রাজধানী জাঞ্জিবারে স্থানান্তরিত করেন। ১৮৬১ সালে জাঞ্জিবার ওমান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু আরব শাসকদের আধিপত্য এবং দাস ব্যবসা অব্যাহত থাকে। ১৮৭৮ সালে দাস ব্যবসা বন্ধ করা হয়। ১৮৮৬ সালে জার্মানির সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ব্রিটেন জাঞ্জিবারের আশেপাশের তাঙ্গানিকা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৮৯০ সালে জাঞ্জিবার ব্রিটেনের অধীনে একটি প্রোটেক্টরেট হয়। ১৯৬৩ সালে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৬৪ সালে বামপন্থী আফ্রো-শিরাজি দলের নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে আরব শাসকদের উৎখাত করা হয় এবং পরে তাঙ্গানিকার সাথে একীভূত হয়ে তানজানিয়া গঠিত হয়।

জাঞ্জিবারের ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য আমরা আপনাকে পরবর্তীতে আরও তথ্য প্রদান করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • জাঞ্জিবার তানজানিয়ার একটি স্বশাসিত দ্বীপ অঞ্চল।
  • মশলা চাষ, পর্যটন এবং রাফিয়া পাম এর প্রধান শিল্প।
  • ঐতিহাসিক স্টোন টাউন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
  • আফ্রিকা, আরব, পারস্য, ভারত ও ইউরোপের মিশ্র সংস্কৃতি।
  • ১৯৬৪ সালে তাঙ্গানিকার সাথে মিলিত হয়ে তানজানিয়া গঠিত হয়।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।