চৌরঙ্গী

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৫৬ এএম
নামান্তরে:
চৌরঙ্গি
চৌরঙ্গী

চৌরঙ্গী: কলকাতার ঐতিহাসিক স্থান

চৌরঙ্গী কলকাতার মধ্যাংশের একটি অঞ্চল, যা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত। পশ্চিম দিকে জওহরলাল নেহেরু রোড (পূর্বে চৌরঙ্গী রোড নামে পরিচিত) অবস্থিত। চৌরঙ্গী কেবল একটি রাস্তা নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পন্ন অঞ্চল। এখানে রয়েছে ব্যবসায়িক কেন্দ্র, হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র এবং আরও অনেক কিছু।

চৌরঙ্গীর নামকরণ:

'চৌরঙ্গী' নামের উৎপত্তি সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, চৌরঙ্গী গিরি নামে এক সন্ন্যাসীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছে।

ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত:

ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে এখনকার ময়দান ও এসপ্ল্যানেড এলাকাটি ছিল ব্যাঘ্র-সংকুল জঙ্গল। এই জঙ্গলের পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন রাস্তা ছিল, যা সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার বড়িশা থেকে হালিশহর পর্যন্ত নির্মাণ করেছিলেন। সেই অঞ্চলে ছিল তিনটি ছোট গ্রাম: চৌরঙ্গী, বিরজি এবং কোলিম্বা। ১৭১৭ সালে চৌরঙ্গী ছিল জলাভূমি-আকীর্ণ ধানক্ষেত এবং বাঁশঝাড়ে পরিপূর্ণ একটি ছোট গ্রাম। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তারা ১৭৫৮ সালে নতুন ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণ শুরু করে এবং ইউরোপীয় বাসিন্দারা ময়দানের আশেপাশে বসতি স্থাপন শুরু করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংরেজরা চৌরঙ্গীতে বড় অট্টালিকা নির্মাণ করতে শুরু করে, যার ফলে কলকাতা 'প্রাসাদ নগরী' হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৮৩৯ সালে চিৎপুর রোড (বর্তমান রবীন্দ্র সরণি) কলকাতার প্রথম পাকা রাস্তা হিসেবে নির্মিত হয়। ১৮৫৭ সালে চৌরঙ্গী এলাকা গ্যাসের আলোয় সজ্জিত হয় এবং ১৮৫৮ সালে প্রথম ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়।

চৌরঙ্গী এবং কলকাতার উন্নয়ন:

চৌরঙ্গী রোড দক্ষিণে লোয়ার সার্কুলার রোড (বর্তমান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) থেকে উত্তরে ধর্মতলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চৌরঙ্গী রোড কলকাতার অন্যতম প্রধান রাস্তা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা, থিয়েটার, ক্লাব, স্কুল এবং কলেজ রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার পর রাস্তার নাম পরিবর্তন করা হয়। চৌরঙ্গী রোডের নামকরণ করা হয় জওহরলাল নেহেরুর নামানুসারে। অন্যান্য রাস্তার নামও পরিবর্তন করা হয়।

চৌরঙ্গীর জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান:

চৌরঙ্গী কলকাতার মধ্যভাগে অবস্থিত। কলকাতা পৌরসংস্থার বিভিন্ন ওয়ার্ড চৌরঙ্গী এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই এলাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫৯,৯১৭।

চৌরঙ্গী এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব:

চৌরঙ্গী কলকাতার সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬২ সালে শংকরের 'চৌরঙ্গী' উপন্যাস প্রকাশিত হয়, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ও নাটকও নির্মিত হয়েছে। ১৯৮১ সালে অপর্ণা সেন '৩৬ চৌরঙ্গী লেন' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

উপসংহার:

চৌরঙ্গী কলকাতার একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত।

মূল তথ্যাবলী:

  • চৌরঙ্গী কলকাতার একটি ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
  • জওহরলাল নেহেরু রোড চৌরঙ্গীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
  • চৌরঙ্গী নামের উৎপত্তি সম্পর্কে মতভেদ আছে।
  • পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের ক্ষমতার বৃদ্ধি চৌরঙ্গীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ১৯৬২ সালে প্রকাশিত শংকরের 'চৌরঙ্গী' উপন্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।