চেতনা (ইংরেজি: Consciousness) মনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য। একে অনেকগুলি মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি হিসেবেও দেখা যায়, যেমন আত্মমাত্রিকতা, আত্মচেতনা, অনুভূতিশীলতা, পৃথকীকরণ ক্ষমতা, এবং নিজের সত্তা ও আশেপাশের পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতা। দর্শন, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং বোধ বিজ্ঞানে চেতনা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলে।
চেতনার সহজ ব্যাখ্যা হলো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অস্তিত্বের সচেতনতা। তবে এর প্রকৃতি নিয়ে দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও ধর্মতত্ত্ববিদদের মধ্যে সহস্রাব্দ ধরে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলে আসছে। কোন বিষয়কে চেতনা হিসেবে বিবেচনা করা হবে বা গবেষণার আওতায় আনা হবে সে ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু ব্যাখ্যায় একে মনের সাথে সমার্থক হিসেবে দেখানো হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে একে মনের একটি দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতীতে একে ব্যক্তির 'অভ্যন্তরীণ জীবন', অন্তর্দৃষ্টির জগৎ, ব্যক্তিগত চিন্তা, কল্পনা ও ইচ্ছাশক্তির জগৎ হিসেবে ধরা হতো। আজকাল এর সাথে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি বা অনুধাবনকেও যুক্ত করা হয়। এটি হতে পারে সচেতনতা, সচেতনতার সচেতনতা, মেটাকগনিশন বা আত্ম-সচেতনতা, যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। গবেষণা, ধারণা ও অনুমানের এ বিশাল পরিসর এই প্রশ্ন তোলে যে, আমরা কি সঠিক প্রশ্নগুলোই করছি?
চেতনার বর্ণনা, সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যায় বিভিন্ন দিক উঠে আসে: নিজের ও পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য, সাধারণ জাগ্রত অবস্থা, ‘ভেতরে তাকিয়ে’ নিজের অস্তিত্ব বা আত্মার অনুভূতি; চিন্তার ধারা হিসেবে, অথবা মস্তিষ্কের মানসিক অবস্থা, মানসিক ঘটনা বা মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে।
ইংরেজি ভাষায় 'conscious' এবং 'consciousness' শব্দদ্বয় সপ্তদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়। প্রথমবার 'conscious' শব্দটির ব্যবহার নির্জীব বস্তুর জন্য কাল্পনিকভাবে করা হয় ('the conscious Groves', 1643)। এটি ল্যাটিন conscius (con-
সাথে জানা
অন্যের সাথে যৌথ বা সাধারণ জ্ঞান থাকা
গোপনীয়তা ভাগ করা
স্ব-জ্ঞান
নিজের সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
আধুনিক ইংরেজিতে 'conscious' শব্দের অর্থের অনুরূপ। উদাহরণস্বরূপ, ১৬১৩ সালে আর্চবিশপ উশার লিখেছিলেন “being so conscious unto myself of my great weakness”।
ল্যাটিন conscientia, অর্থে প্রথম রোমান আইনি গ্রন্থে দেখা যায়। এর অর্থ কোনও সাক্ষীর অন্য কারও কাজ সম্পর্কে জ্ঞান। যদিও রেনে ডেকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) ল্যাটিন ভাষায় লিখেছিলেন এবং সাধারণত তাকেই প্রথম দার্শনিক হিসেবে মনে করা হয় যিনি conscientia শব্দটি পারম্পরিক অর্থের চেয়ে আধুনিক ইংরেজী ভাষায় ‘conscience’ ব্যবহারের ধারায় ব্যবহার করেছিলেন, তবে তার ব্যবহার কখনোই সংজ্ঞায়িত হয়নি।
আধুনিক চেতনার ধারণার উৎস সাধারণত জন লকের কাছে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৯০ সালে প্রকাশিত তার Essay Concerning Human Understanding গ্রন্থে চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন
। এই গ্রন্থটি অষ্টাদশ শতাব্দীর ব্রিটিশ দর্শনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মধ্যে চেতনার একটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত সংজ্ঞা তৈরি করা এখনও কঠিন। একটি একক, সর্বজনস্বীকৃত, তত্ত্ব-স্বাধীন সংজ্ঞায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা দূরবর্তী বলে মনে হয়।