চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি: বাংলাদেশের নতুন রপ্তানি অভিযান
ফ্যাশনেবল, টেকসই এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে চামড়াবিহীন জুতা বা নন-লেদার ফুটওয়্যারের চাহিদা বিশ্বব্যাপী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাজারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪১.৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা করোনার পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় অনেক বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯.১০ শতাংশ বেশি। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে ইউরোপের উচ্চমূল্যস্ফীতির প্রভাব কমে আসা। এছাড়াও, বিশ্বের শীর্ষ জুতা রপ্তানিকারক চীন থেকে বিভিন্ন কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ সরিয়ে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছে।
চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জুতা রপ্তানির হিস্যা এখনও খুব কম। ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ২,২৪০ কোটি জোড়া জুতা উৎপাদিত হয়েছে, যার মধ্যে ১,৪০০ কোটি জোড়া রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির বেশিরভাগই ছিল চামড়াবিহীন জুতা। চীন বৈশ্বিক জুতা রপ্তানির প্রায় ৬৩.৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের জুতা শিল্প প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় করে।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন ন্যাশনাল পলিমার (এনপলি) গ্রুপের এনপলি ফুটওয়্যার (পূর্বের শুনিভার্স ফুটওয়্যার), ময়মনসিংহের ভালুকায় পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন করে চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদন ও রপ্তানি করছে। এই কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কর্মরত। রপ্তানি সম্ভাবনা বিবেচনা করে কারখানার সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তবে, কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা, দক্ষ জনবলের অভাব এবং বড় অর্ডার পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। চীন থেকে বিকল্প উৎস হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের সুযোগে এ খাতের সম্ভাবনাকে আরও বাস্তবায়িত করতে সরকারি নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।