চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর: বাংলাদেশের অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের প্রধান এবং সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইংরেজ শাসনামলে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট এবং ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দী থেকেই আরব বণিকরা এ বন্দর ব্যবহার করে আসছিলেন। পর্তুগিজ, মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এই বন্দরের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে বন্দর অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও অবকাঠামো:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে অবস্থিত। এর উত্তরে অক্ষাংশ ২২° ১৮' ৪৫
, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৪৬' ৩০
, দক্ষিণে অক্ষাংশ ২২° ০৮' ১৩
, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৫০' ০০
। বর্তমানে বন্দরে স্থায়ী পাকা জেটি ১৫ টি, পন্টুন জেটি ২ টি, বেসরকারি জেটি ৩ টি, লাইটার জেটি ৮ টি, মুরিং বার্থ ১১ টি এবং মাল্টি পারপাস বার্থ (কন্টেইনার জেটি) ১২ টি রয়েছে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান দ্বার। দেশের অর্থনীতির বৃহৎ অংশ এই বন্দরের উপর নির্ভরশীল। পাট, চা, গার্মেন্টস, হিমায়িত মাছ, চিংড়ি আদি রপ্তানি পণ্য এবং খাদ্যশস্য, সিমেন্ট, পেট্রোলিয়াম আদি আমদানি পণ্য এই বন্দরের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।
বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বন্দরের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বন্দরের বাইরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন জেটি নির্মাণ, নদী খনন প্রভৃতি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। এসব উন্নয়ন কার্যক্রম দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখবে।