গোবরডাঙা: উত্তর ২৪ পরগণার একটি ঐতিহাসিক শহর
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার অন্তর্গত গোবরডাঙা শহরটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা এলাকা। প্রাচীন কুশদহ পরগনা বা কুশদ্বীপের অংশ হিসেবে এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। একসময় নদীবেষ্টিত, বাঁশবন সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি মানুষের কাছে দুর্গম ছিল। কালক্রমে জনবসতি বৃদ্ধি পেয়ে গোবরডাঙা জমিদারবংশ ও সংস্কৃত পণ্ডিতদের জন্য খ্যাতি অর্জন করে। ইছামতি ও চালুন্দিয়া নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৮৫০-৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ষষ্ঠিতলা গ্রামে খননকার্যে প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তি ও মানুষের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। মাটিকোমরা অঞ্চলেও প্রাচীন অট্টালিকা ও ইটের স্তুপ পাওয়া গেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে যশোরের শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় ইংরেজদের কাছ থেকে গোবরডাঙার জমিদারি কিনেছিলেন। তার পুত্র কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জমিদারি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছিলেন। গোবরডাঙা জমিদারদের বিভিন্ন ভবন এখন ভগ্নাবস্থায় রয়েছে। কুশদহ পরগনার মাটিকোমরা, গৈপুর, খাঁটুরা প্রভৃতি অঞ্চল ‘নবন্যায়’ শাস্ত্রের বিখ্যাত পণ্ডিতদের আবাসস্থল ছিল। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার, কথক রামধন তর্কবাগীশ, শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, মুরলীধর বন্দ্যোপাধ্যায় এই অঞ্চলের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ‘বাংলার তানসেন’ যদুভট্টের গুরু গঙ্গানারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও গোবরডাঙার বাসিন্দা ছিলেন। প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসু গৈপুরের বসু পরিবারের সদস্য ছিলেন।
১৬ শতকের মাঝামাঝি বর্গী হাঙ্গামার কারণে সপ্তগ্রামের ৪২ ঘর তাম্বুলি বণিক খাঁটুরায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তারা চিনি, ধানচাল ব্যবসায় খ্যাতি অর্জন করেছিল। গোবরডাঙার প্রসন্নময়ী কালী মন্দির ও জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
গোবরডাঙার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°৫২′ উত্তর ৮৮°৪৬′ পূর্ব। সমুদ্রতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৬ মিটার। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৪১,৬১৮ জন। সাক্ষরতার হার ৮০%। গোবরডাঙায় গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ এবং একটি বি.এড কলেজ আছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- গোবরডাঙা উত্তর ২৪ পরগণার একটি প্রাচীন শহর।
- জমিদারবংশ ও সংস্কৃত পণ্ডিতদের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে।
- ইছামতি ও চালুন্দিয়া নদীর তীরে অবস্থিত।
- প্রাচীন মন্দির ও অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
- গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ এবং একটি বি.এড কলেজ আছে।
- সাক্ষরতার হার ৮০%।