গোদাগাড়ী উপজেলা: রাজশাহীর একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা ৪৭৫.২৬ বর্গ কিমি আয়তনের একটি অঞ্চল, যা ২৪°২১´ থেকে ২৪°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৭´ থেকে ৮৮°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে নবাবগঞ্জ সদর ও তানোর, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও গঙ্গা নদী, পূর্বে পবা ও তানোর, এবং পশ্চিমে নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০২৩ সালের হিসেবে এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০৯২৪, যার মধ্যে পুরুষ ১৬৬২৬০ এবং মহিলা ১৬৪৬৬৪। এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।
গোদাগাড়ীর ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৮৬৫ সালে গঠিত থানাটি ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে উপরবাড়ী টিলা বৌদ্ধ বিহার, কুমারপুরের আলী কুলীবেগের মাজার, দেওপাড়া গ্রামের পদুমসার শিব মন্দির, দীঘি ও প্রশস্তি শিলালিপি, হযরত শাহ সুলতানের মাজার, খেতুরের শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দির (১৫৮২) এবং মাণ্ডইলের জৈন মন্দির। মুক্তিযুদ্ধে গোদাগাড়ী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পাকবাহিনীর সাথে লড়াইয়ে ইপিআর সিপাই আব্দুল মালেক শহীদ হন। ২৬ ও ৩০ মে পাকবাহিনী ৩১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
অর্থনীতিতে, কৃষি গোদাগাড়ীর প্রাণ। ধান, পাট, গম, আখ, মাসকলাই প্রধান ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু প্রধান ফল। ধানকল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং ইত্যাদি ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তা, রেলপথ ও নৌপথ বিদ্যমান। শিক্ষার দিক দিয়ে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং মাদ্রাসা রয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা এবং তীর্থস্থান রয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্লাব, লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বেসরকারি হাসপাতাল বিদ্যমান। বিভিন্ন এনজিও গোদাগাড়ীর উন্নয়নে কাজ করে। সার্বিকভাবে, গোদাগাড়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় উপজেলা যা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ।