গিস লে পেলিকোত: ফ্রান্সের কলঙ্কজনক ধর্ষণ মামলা ও এক নারীর সাহসের গল্প
গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের আভিগনোনে এক অভূতপূর্ব ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আলোচনায় পরিণত হয়েছে। এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন গিস লে পেলিকোত, যিনি নিজের স্বামী ডোমিনিক পেলিকোত কর্তৃক এক দশক ধরে চালানো নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ:
৭২ বছর বয়সী ডোমিনিক পেলিকোত তার স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে অন্য পুরুষদের দিয়ে ধর্ষণ করাতেন। এমন ভয়ংকর ও অমানবিক ঘটনা প্রায় এক দশক ধরে চলেছে, যার মধ্যে গিস লে পেলিকোত ৯২ বারেরও বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ডোমিনিক অনলাইনে এসব পুরুষদের খুঁজে পেতেন।
বিচার ও রায়:
গত সেপ্টেম্বর থেকে আভিগনোনের আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। বৃহস্পতিবার, ডোমিনিক পেলিকোতকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি তার সহযোগী ৫০ জনকে ৩ থেকে ১৫ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দুজনের সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
গিস লে পেলিকোতের সাহস:
গিস লে পেলিকোতের সাহস ও দৃঢ়সংকল্প মামলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। তিনি মামলাটি প্রকাশ্যে আনা এবং বিচারের দাবী জানান। তিনি তার নাম গোপন রাখার অধিকার পরিত্যাগ করেছেন এবং সাহসের সাথে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ইয়ায়েল ব্রাউন-পিভেট তাকে তার সাহসের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আদালতের বাইরে অনেকেই তার সমর্থনে জড়ো হয়েছিলেন।
অভিযুক্তদের বৈচিত্র্য:
৫০ জন অভিযুক্তের মধ্যে তরুণ, বৃদ্ধ, মোটা, পাতলা, কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে গাড়িচালক, দমকল কর্মকর্তা, সেনাসদস্য, নিরাপত্তারক্ষী, সাংবাদিক এবং ডিজেও রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগেরই সন্তান আছে এবং অর্ধেক বিবাহিত বা প্রেম সম্পর্কে আবদ্ধ।
ফ্রান্সে যৌন নিপীড়নের পরিসংখ্যান:
ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব পাবলিক পলিসিজের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে যৌন নিপীড়নের ৮৬% ও ধর্ষণের ৯৪% অভিযোগ বিচারের আওতায় আসে না।
গিস লে পেলিকোত মামলার গুরুত্ব:
এই মামলাটি ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধর্ষণ মামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশটিতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে বদলে দিয়েছে। এটি যৌন সহিংসতায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।