খৎনা

খনা: এক অমর নারীর জ্যোতির্বিদ্যা ও বচন

খনা, বা ক্ষণা, বাংলার ইতিহাসে এক আলোকিত নাম। ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণকারী এই নারী ছিলেন জ্যোতিষশাস্ত্রে অত্যন্ত দক্ষ। তার অমূল্য উপদেশ ও ভবিষ্যদ্বাণী, 'খনার বচন' নামে পরিচিত, আজও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলায় প্রচলিত।

খনার জন্মস্থান ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিভিন্ন কিংবদন্তি প্রচলিত। একাংশ মনে করেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া (বর্তমান চন্দ্রকেতুগড় প্রত্নস্থল) গ্রামে বাস করতেন। অন্য কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। তাঁর পিতার নাম অনাচার্য বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। খনার স্বামী ছিলেন বরাহমিহিরের পুত্র মিহির, যিনি বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ছিলেন।

খনা ও মিহির উভয়েই জ্যোতিষবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। একদিন বরাহ ও মিহির আকাশের নক্ষত্র গণনায় সমস্যায় পড়লে, খনা সমাধান প্রদান করে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রাজার কাছে খনার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনার বিবরণে বরাহ ও মিহিরের ঈর্ষা প্রকাশিত হয়। বরাহের নির্দেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। পরবর্তীতে খনার মৃত্যু হয়।

'খনার বচন' গ্রামীণ বাংলার জীবন-জীবিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। কৃষিকাজ, ঋতু পরিবর্তন, আবহাওয়া, ফসলের উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর বচনগুলিতে উপদেশ ও ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। এগুলির অনেকেরই বাস্তবসম্মততা আজও লক্ষ্য করা যায়। বাংলা সাহিত্যে খনার অবদান অসামান্য। তিনি ছিলেন এক প্রতিভাবান নারী, যাঁর জ্ঞান ও দক্ষতা আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।

২০০৯ সালে জি বাংলা এবং ২০২৩ সালে কালার্স বাংলা চ্যানেলে খনার জীবনী নির্ভর ধারাবাহিক প্রচারিত হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • খনা ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতিষী ও বচন রচয়িতা।
  • তার ভবিষ্যদ্বাণী ‘খনার বচন’ নামে পরিচিত।
  • ৮০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জন্ম বলে অনুমান করা হয়।
  • পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে তার বসবাস ছিল বলে মনে করা হয়।
  • খনার জীবন ও ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে।