চারদিনের রহস্য: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ হাসানের ‘গুম’ ও উদ্ধারের ঘটনা
গত ২০ ডিসেম্বর, শুক্রবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খালেদকে ‘গুম’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল আন্দোলনের সমন্বয়করা। চার দিনের রহস্যের পর মঙ্গলবার রাতে তিনি হঠাৎ করেই হলে ফিরে আসেন। এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ঘটনার বর্ণনা:
খালেদ হাসানের বর্ণনা অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেলে টিএসসি থেকে রিকশায় করে দোয়েল চত্বরের দিকে যাওয়ার সময় রিকশাতেই অজ্ঞাত কারণে তিনি জ্ঞান হারান। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে পেয়ে নিজেকে সুনামগঞ্জের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে একটি মাইক্রোবাসে দেখতে পান। তার সাথে আরও দুই-তিনজন ছিল। পুনরায় জ্ঞান হারানোর পর তিনি পঞ্চগড়ের কোনো এক স্থানে এবং অবশেষে বরিশালের এক রাস্তার ধারে নিজেকে পেয়ে যান। পরে কেউ তাকে গাড়িতে তুলে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং তিনি নিজ হলে ফিরে যান।
মানসিক অবস্থা ও চিকিৎসা:
খালেদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তিনি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছিলেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা তার সম্পূর্ণ সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কথা বলতে নিষেধ করেন।
বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ঘটনাকে ‘গুম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং খালেদের সাথে কথা বলে ঘটনার বর্ণনা দেন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফারুক শাহ খালেদের দুর্বল ও ভীত অবস্থা দেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। খালেদের বাবা লুৎফর রহমানও ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্ন:
খালেদের নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা প্রশ্ন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এ ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে ‘গুম’ করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তারা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে, অনেকেই একে সাজানো নাটক বলে মনে করছেন।
উপসংহার:
খালেদ হাসানের নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনা রহস্যময় এবং উদ্বেগজনক। ঘটনার পেছনের সত্য উদঘাটনের জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য। এই ঘটনায় শিক্ষার্থী সমাজের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।