খুলনা জেলার অন্যতম উপজেলা কয়রা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। ১৭৭৫.৪০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২২°১২´ থেকে ২২°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫´ থেকে ৮৯°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে পাইকগাছা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন, পূর্বে দাকোপ এবং পশ্চিমে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় কয়রা ঘেরা। ১৯৮০ সালে থানা হিসেবে গঠিত হয়ে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
জনসংখ্যা প্রায় ১৯৩৯৩১ জন, পুরুষ ৯৫৩৯৩ এবং মহিলা ৯৮৫৩৮। মুসলিম ১৫২৯৮০, হিন্দু ৪০১৯৭, খ্রিস্টান ৪৭৬ এবং অন্যান্য ২৭৮। ধরলা, পশুর, অর্পণগাছিয়া, তালধুপ নদী এবং কয়রা খাল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
কয়রার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বুড়ো মসজিদ (পঞ্চদশ শতাব্দী), পরিমালা মূর্তি (চামুন্ডা), মালি বাড়ি মসজিদ, ঢালী বাড়ি মসজিদ, মদিনাবাদ ফকিরবাড়ি মসজিদ, মসজিদ আল হেরা, বড়বাড়ি পূজা মন্দির, বাঁশখালি বাহাদুর বাড়ি মন্দির, হরিপুর কালী মন্দির, মঠবাড়ি দূর্গা মন্দির, রাধা গোবিন্দ মন্দির, মদিনাবাদ মন্দির- এসব স্থাপনা কয়রার ঐতিহ্যের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরের অধীনে কয়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৯ নং সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার এখানেই স্থাপিত হয়। শহীদ নারায়ণ ক্যাম্প এবং সোহারওয়ার্দী ক্যাম্প স্থাপিত হয় যথাক্রমে ঝিলে ঘাটা এবং বামিয়া গ্রামে। ডাঃ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন গোপন চিকিৎসা কেন্দ্র আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিত।
কয়রার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, আলু, শাকসবজি প্রধান ফসল। আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারিকেল প্রধান ফল। মৎস্য চাষও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিংড়ি ঘের, পোনা উৎপাদন খামার, চিংড়ি ডিপো ও নার্সারি বিদ্যমান। কয়রার শিক্ষার হার ৫০.৪%; পুরুষ ৫৫.৮%, মহিলা ৪৫.২%। কলেজ, মাধ্যমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা বিদ্যমান। কপোতাক্ষ (২০০২) নামক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সুন্দরবনের সুন্দর প্রবেশদ্বার হিসেবে মহেশ্বরীপুর পর্যটন কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য। কয়রা উপজেলার সব ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার ২৫.২%। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দাতব্য চিকিৎসালয় ও ক্লিনিক রয়েছে। ব্র্যাক, প্রশিকা ও প্রদীপন এর মতো এনজিও কাজ করে।