বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার (Climate Smart Agriculture - CSA) এর গুরুত্ব ব্যাপক। ২০২০ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কর্তৃক প্রবর্তিত এই ধারণা টেকসই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসলের অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন লক্ষ্য নিশ্চিত করে।
FAO এর সংজ্ঞানুসারে, CSA তিনটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: ১) টেকসই কৃষি ও শস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, ২) জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, ৩) গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস বা অপসারণ।
CSA একটি নির্দিষ্ট কৃষি কারিগরী নয় বরং বিভিন্ন টেকসই কৃষি কৌশল যেমন Agroforestry, Conservation Agriculture, Integrated-Livestock Systems, উন্নত জল ব্যবস্থাপনা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ঝুঁকি বীমা ইত্যাদির সমন্বয়। এই পদ্ধতি বহুলভাবে সমালোচিত হলেও, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন FAO, IFAD, UNEP, বিশ্ব ব্যাংক এবং WFP এর সাথে CGIAR এর মতো সংগঠনগুলো এটিকে উন্নীত করছে।
CSA মূলত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য প্রণয়ন করা হলেও, এর নীতিমালা উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে; তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আগাছা, রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থায় পরিবর্তন ইত্যাদি। ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, বিভিন্ন ফলমূল ইত্যাদির উৎপাদনে হ্রাস পেয়েছে।
জলবায়ু সুসামঞ্জস্য কৃষি নিশ্চিত করার জন্য, উপযুক্ত নীতিমালা, প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোর পাশাপাশি তথ্যসমৃদ্ধ ও সম্পদশালী জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ৭ম D-8 কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্মেলনে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষির উন্নয়ন মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। সম্মেলনে বহুদেশীয় সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার মাধ্যমে যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণ করা হবে।
জলবায়ু সুসামঞ্জস্য কৃষি কৌশলের মূলমন্ত্র হলো কৃষি উপকরণ ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি। কম উপকরণ ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন, পানি সংরক্ষণ, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, সার ব্যবস্থাপনা, খরা সহিষ্ণু ও উদ্যান ফসল চাষ, টেকনোলজি অ্যাসেসমেন্ট মডিউল (যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শস্য উৎপাদন ইত্যাদি) এইসব গুরুত্বপূর্ণ।
Conservation agriculture, পানি স্মার্ট, কার্বন স্মার্ট, নাইট্রোজেন স্মার্ট, এনার্জি স্মার্ট এবং নলেজ স্মার্ট পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা, কমে যাওয়া আবাদি জমি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনা করে জলবায়ু উপযোগী কৃষির জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উপযোগী কর্মপদ্ধতি, শস্য বহুমুখীকরণ এবং সাবধানতার সাথে অন্যান্য শস্য ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ।