কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (৩১ মে, ১৮৩৪ - ১৩ জানুয়ারি, ১৯০৭) একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও পত্রিকা সম্পাদক ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারেননি। কীর্তিপাশার জমিদার পরিবারের আর্থিক সহায়তায় তিনি জীবনযাপন করতেন। ১৯১৪ সালে কবির স্মৃতিরক্ষার্থে দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামে কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্ম হয় বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে। তার পিতার নাম ছিল মাণিক্যচন্দ্র মজুমদার। পিতার মৃত্যুর পর ঢাকায় তিনি এক জ্ঞাতির আশ্রয়ে থাকেন এবং ফরাসি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৫৪ সালে বরিশালের কীর্তিপাশা বাংলা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা নর্মাল স্কুল, মডেল স্কুল (১৮৬০) এবং অবশেষে যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মোট উনিশ বছর তিনি বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। অবসরের পর সেনহাটিতে বসবাস করেন এবং বিভিন্ন সঙ্গীত রচনা করেন। ১৯০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
তার প্রথম ও অন্যতম গ্রন্থ "সদ্ভাব শতক" (১৮৬১)। এই গ্রন্থের বেশিরভাগ কবিতা নীতিমূলক, যা সুফী ও হাফিজের ফার্সি কবিতার ধারায় রচিত। ছেলেবেলায় তার ছদ্মনাম ছিল রামচন্দ্র দাস, সংক্ষেপে রাম। "রামের ইতিবৃত্ত" (১৮৬৮) তার আত্মজীবনীমূলক রচনা। মহাভারতের "বাসব-নহুষ-সংবাদ" অবলম্বনে তিনি "মোহভোগ" (১৮৭১) লেখেন। "কৈবল্যতত্ত্ব" (১৮৮৩) তার একটি দর্শনবিষয়ক গ্রন্থ। মৃত্যুর পরে তার "রাবণবধ" নাটক প্রকাশিত হয়। তার অপ্রকাশিত রচনার সংখ্যা পনেরো। তার লেখা প্রসাদময় এবং অনেক পঙ্ক্তি প্রবাদবাক্যের রূপ ধারণ করেছে। "চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে" তার একটি বিখ্যাত কবিতার পংক্তি।
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ১৮৬০ সালে "মনোরঞ্জিকা" ও "কবিতাকুসুমাবলী" পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৮৬১ সালে "ঢাকা প্রকাশ" পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। পরবর্তীতে "বিজ্ঞাপনী" (১৮৬৫) পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে সাংবাদিকতা ত্যাগ করে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৮৮৬ সালে যশোর থেকে "দ্বৈভাষিকী" নামে একটি দ্বিভাষিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। "কবিতাকুসুমাবলী" পত্রিকায় তার "সদ্ভাবশতক" কাব্যের অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল।