কায়কোবাদ: বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ
মহাকবি কায়কোবাদ, বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট কবি, যিনি তার মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ এর জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার জন্ম ১৮৫৭ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে। তার প্রকৃত নাম ছিল মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। কায়কোবাদ ছিলেন তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম। তিনি ঢাকা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী, শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশীর পুত্র। তিনি সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা মাদ্রাসায় (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন, তবে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তিনি পোস্টমাস্টারের চাকরি গ্রহণ করে তার স্থানীয় গ্রামে ফিরে যান এবং সেখানেই অবসর গ্রহণ করেন।
কায়কোবাদের সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয় অতি অল্প বয়সে। মাত্র তেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য ‘বিরহবিলাপ’ প্রকাশিত হয় (১৮৭০)। ‘মহাশ্মশান’ ছাড়াও তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল ‘কুসুমকানন’, ‘অশ্রুমালা’, ‘শিবমন্দির’, ‘মহরম শরীফ’, ‘গীতিকাব্য’ এবং ‘আযান’। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রচিত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যে কায়কোবাদ যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের চেয়ে ধ্বংসের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। এ কাব্যটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি এবং এর মাধ্যমেই তিনি মহাকবির মর্যাদা অর্জন করেন। তার কাব্যে প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ও আধ্যাত্মিকতার অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।
কায়কোবাদ ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম মুসলিম সনেট রচয়িতা এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি। তিনি পশ্চাৎপদ মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের অতীত ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী এবং হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। ১৯৩২ সালে তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫১ সালের ২১শে জুলাই ঢাকায় তার মৃত্যু হয় এবং তাকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।