ইরানের প্রাচীন জলসিঞ্চন ব্যবস্থা ‘কানাত’ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা:
প্রাচীন পারস্য সভ্যতার অসাধারণ প্রকৌশলিক দক্ষতার এক অনন্য উদাহরণ হল কানাত। ৩০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই জল পরিবহন ব্যবস্থাটি মরুভূমি অঞ্চলে জলের স্থায়ী উৎস নিশ্চিত করেছিল। কানাত মূলত পাহাড়ের পাদদেশে অথবা পানি উৎসস্থল থেকে মরুভূমির নিচ দিয়ে খাল খনন করে শহর পর্যন্ত জল সরবরাহের একটি ব্যবস্থা। এই খালগুলি পানি প্রবাহিত করার জন্য হালকা ঢালুভাবে তৈরি করা হয় এবং মাঝে মাঝে বাতাস চলাচলের জন্য বাতাসের ছিদ্র রাখা হয়।
কানাতের নির্মাণ কাজ ছিল অত্যন্ত জটিল ও শ্রমসাধ্য। পাথুরে ভূমি খনন করার জন্য তৎকালীন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় ও প্রচুর শ্রমের প্রয়োজন হতো। এই কারণে কানাত নির্মাণের সাথে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত ছিল। পাহাড় থেকে শহর পর্যন্ত কানাতের দৈর্ঘ্য কয়েক কিলোমিটার হতে পারে।
কানাত ব্যবস্থা শুধুমাত্র ইরানেই নয়, মরক্কো, আলজেরিয়া, লিবিয়া এবং আফগানিস্তানের মতো দেশগুলিতেও প্রচলিত ছিল। এই প্রাচীন প্রযুক্তিটি মরু অঞ্চলে জলের স্থায়ী উৎস নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেইসব অঞ্চলে কৃষিকাজ ও মানব বসতি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
ইউনেস্কো কানাতকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০০৭ সালে ইরানের গোনাবাদের কানাত ও ২০১৬ সালে আরও ১০টি কানাত ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এইসব কানাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাসাবেহ গোনাবাত, বালাদেহ, জারচ, হাসাম আবাদ-ই মশির, ইবরাহিম আবাদ, ভাজভান, মোজদ আবাদ, দ্য মুন, গোওহারিজ, কাসেম আবাদ ও আকবর আবাদ।
কানাতের ইতিহাস, এর প্রকৌশলিক দক্ষতা, এবং মরুভূমি অঞ্চলের মানুষের জীবনে এর অবদান ইতিহাস ও প্রকৌশলবিদ্যার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাচীনকালীন প্রযুক্তির অপূর্ব এক নিদর্শন যেটি আজও মানবতার কাছে প্রশংসা ও অনুপ্রেরণার উৎস।