কানাইঘাট উপজেলা: সিলেটের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ধারক
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল কানাইঘাট। সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার নামকরণের দুটি প্রচলিত কাহিনী রয়েছে। একটি কাহিনী অনুসারে, সুরমা নদীর ঘাটে কানাই নামক এক মাঝির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। আরেকটি কাহিনী অনুসারে, জৈন্তা রাজ্যের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কানাই পাটোয়ারীর নামানুসারে উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রাচীনকালে কানাইঘাট স্বাধীন জৈন্তা রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৩৫ সালের ১৬ই মার্চ ব্রিটিশরা জৈন্তা রাজ্য দখল করলে কানাইঘাট ব্রিটিশ শাসনের আওতায় চলে আসে। ১৮৪১ সালে মুলাগুল পরগণায় ঝর্ণা টিলায় থানা স্থাপিত হয়, পরবর্তীতে ১৮৮০ সালে কানাইঘাট স্থানান্তরিত হয়। ১৯০৫ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা এবং মসজিদ নির্মাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কানাইঘাটেও তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে কানাইঘাট স্বাধীনতা লাভ করে। ২৪শে মার্চ ১৯৮৩ সালে কানাইঘাট থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কানাইঘাট উপজেলার আয়তন ৩৯১.৭৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলা ও ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ, পূর্বে ভারতের আসাম এবং পশ্চিমে জৈন্তাপুর ও সিলেট সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুসারে কানাইঘাটের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার, যার ৯৫% মুসলমান, ৪.১০% হিন্দু, ০.২% খ্রিস্টান এবং ০.৩% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
অর্থনীতি ও কৃষি:
কৃষি কানাইঘাটের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। ধান, চা, আলু, তেজপাতা, পান, সুপারি, শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। পাথর কানাইঘাটের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ; লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজস্ব আহরিত হয়। চা, পান পাতা, পাথর, বালু এখানকার প্রধান রপ্তানি।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
কানাইঘাট শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এখানে অসংখ্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ সহ ইসলামি মাদ্রাসা রয়েছে। কানাইঘাট জামে মসজিদ, মঙ্গলপুর প্রেসবিটারিয়ান চার্চ উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
পরিবহন ও যোগাযোগ:
পাকা ও অর্ধ পাকা রাস্তার মাধ্যমে কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন সুবিধাজনক।
উপসংহার:
কানাইঘাট উপজেলা সিলেটের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির ধারক। ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষি সম্পদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনে কানাইঘাট তার আত্মতত্ত্বে অনন্য।