কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন (জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩; কাজী সালাহউদ্দিন নামে সুপরিচিত) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাবেক পেশাদার ফুটবলার এবং ম্যানেজার। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার খেলোয়াড়ি জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ঢাকা আবাহনী এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলে। তিনি একজন আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তিনি ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার রাজাপুরে। তার পিতার নাম কাজী মুহাম্মাদ শফি এবং মাতার নাম সিমকি শফি। তার ডাকনাম ছিল "তূর্য"।
১৯৬৮ সালে দিলকুশা ক্লাবের যুব দলে খেলার মাধ্যমে ফুটবল জীবন শুরু করেন সালাহউদ্দিন। পরবর্তীতে ওয়ারী, ঢাকা মোহামেডান এবং ঢাকা আবাহনীতে খেলেছেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে তিনি হংকংয়ের ক্লাব ক্যারোলাইন হিলে যোগদান করে প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে পেশাদার লীগে খেলার সুযোগ পান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে খেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক করেন এবং ৩০ ম্যাচে ৮টি গোল করেছেন।
খেলোয়াড়ি জীবনের পর ১৯৮৫ সালে ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার হিসেবে ফুটবল জগতে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
খেলোয়াড় হিসেবে ৭টি এবং ম্যানেজার হিসেবে ২টি শিরোপা জিতেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
২০০৮ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে চারবার নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই পদে ছিলেন। ২০২৩ সালে তিনি বাফুফে সভাপতি পদে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন। তার সভাপতিত্বকালে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তবে পুরুষদের জাতীয় দলের সাফল্য কমই পরিলক্ষিত হয়েছে। তার সময়ে বাফুফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছিল।
কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের এক অমিত পরিচিত নাম। তার খেলোয়াড়ি জীবন, কোচিং ক্যারিয়ার এবং বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালনের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই লেখাটি তাঁর অবদান এবং বিতর্কিত দিক উভয়কেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।