কলম্বো: শ্রীলঙ্কার হৃৎস্পন্দন
শ্রীলঙ্কার প্রাণকেন্দ্র কলম্বো, দেশটির নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় রাজধানী এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম শহর। পশ্চিম উপকূলে কেলানি নদীর মোহনায় অবস্থিত এই সমুদ্রবন্দর শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। এর বিশাল কৃত্রিম বন্দর, খাল ও লকের মাধ্যমে বেইরা হ্রদ সংযুক্ত - যা শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। এই বন্দর জাহাজে জ্বালানি পূরণের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কলম্বোর পূর্ব নাম ছিল 'কালান-তোত্তা'। আরব নাবিকদের কালাম্বু নামকরণের পর, ১৫১৭ সালে পর্তুগিজরা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সম্মানে শহরের নামকরণ করে কলম্বো। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ এবং অবশেষে ব্রিটিশরা কলম্বো দখল করে। ১৮১৫ সালে ব্রিটিশরা সমগ্র দ্বীপের শাসক হয়ে কলম্বোকে তাদের উপনিবেশের রাজধানী করে। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পরও কলম্বো রাজধানী থাকে, পরে ১৯৭৮ সালে প্রশাসনিক কার্যক্রম শ্রী জয়বর্ধনপুর কোট্টে স্থানান্তরিত হয়। কলম্বো তখন বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পায়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়া:
কলম্বোর ভৌগোলিক অবস্থান জমি ও জলের মিশ্রণ। বেইরা হ্রদ, কেলানি নদী এবং মোডারা (নদীমুখ) শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বর্ধন করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষার জলবায়ুতে কলম্বোর আবহাওয়া সারা বছর উষ্ণ থাকে। মে থেকে আগস্ট এবং অক্টোবর থেকে জানুয়ারী বর্ষা মৌসুম।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি:
কলম্বো একটি বহুজাতিক, বহুধর্মীয় এবং বহুসংস্কৃতির শহর। সিংহলি, শ্রীলঙ্কান তামিল, শ্রীলঙ্কান মুরসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখানে বসবাস করে। চীনা, পর্তুগিজ বুর্গার, ওলন্দাজ বুর্গার, মালয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের ছোট ছোট সম্প্রদায়ও আছে। কলম্বোতে বৌদ্ধ মন্দির, হিন্দু মন্দির, মসজিদ এবং খ্রিস্টান গির্জা বিদ্যমান।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
কলম্বো শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। লোহা, ইস্পাত, টেক্সটাইল, বস্ত্র ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, তেল পরিশোধনাগার - সব মিলিয়ে কলম্বোর অর্থনীতিতে গতি আনে। ফোর্ট এলাকা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। আধুনিক উচ্চ ভবন ও পুরানো দালানের মিশ্রণ কলম্বোর সৌন্দর্য্যকে আরও সমৃদ্ধ করে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৭) ও শ্রীলঙ্কা টেকনিক্যাল কলেজ (১৮৯৩) সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলম্বোকে জ্ঞানের আধার বানিয়েছে।
উপসংহার:
কলম্বো শুধু একটি শহর নয়, এটি শ্রীলঙ্কার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই শহরের উন্নয়ন শ্রীলঙ্কার উন্নয়নের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।