উত্তরাঞ্চল: দেবভূমি ও উত্তরাখণ্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
উত্তর ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য উত্তরাখণ্ড, যার পূর্ব নাম ছিল উত্তরাঞ্চল। হিমালয়ের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য এটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ থেকে পৃথক হয়ে উত্তরাখণ্ড ভারতের ২৭তম রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
উত্তরাখণ্ডের উত্তরে চীনের তিব্বত, পূর্বে নেপাল, দক্ষিণে উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমে হিমাচল প্রদেশ অবস্থিত। হিমালয়, ভাবর ও তরাই অঞ্চলের বিশাল বনাঞ্চল, পর্বতশৃঙ্গ, হিমবাহ, নদী, হ্রদ এবং ঝর্ণা এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অপরিসীম করে তুলেছে। গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তিস্থল গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী উত্তরাখণ্ডেই অবস্থিত।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষের বসতি ছিল উত্তরাখণ্ডে। বৈদিক যুগে এটি কুরু ও পাঞ্চাল মহাজনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কুণ্ডিন রাজবংশ, কাত্যুরি রাজবংশ, চন্দ রাজবংশ এবং আরও অনেক রাজবংশের শাসনকাল উত্তরাখণ্ডের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। ১৮০৩ সালে নেপালের গোর্খা সাম্রাজ্য উত্তরাখণ্ড দখল করে, পরে ১৮১৬ সালের ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধের পর এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশকে উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিতে জনআন্দোলন শুরু হয় এবং ২০০০ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে পৃথক হয়ে উত্তরাখণ্ড একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি:
উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের উত্তরাখণ্ডি বলা হয়। গাড়োয়ালি ও কুমায়ুনি হল দুটি প্রধান আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দুধর্মই রাজ্যের প্রধান ধর্ম। জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাজপুত ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। উত্তরাখণ্ডের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ; লোকসংগীত, নৃত্য, কাঠখোদাই শিল্প, এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য এটি বিখ্যাত। কুম্ভমেলা, হোলি, বসন্তপঞ্চমী প্রভৃতি উৎসব এখানে ব্যাপকভাবে পালিত হয়।
অর্থনীতি:
উত্তরাখণ্ডের অর্থনীতি মূলত কৃষি, পর্যটন এবং জলবিদ্যুৎ-নির্ভর। আপেল, কমলালেবু, বাসমতি চাল, এবং ঔষধি গাছের চাষ এখানে প্রচুর পরিমাণে হয়। পর্যটন ক্ষেত্রে হিমালয়ের সৌন্দর্য, তীর্থস্থান, জাতীয় উদ্যান (যেমন জিম করবেট), শৈলশহর (যেমন নৈনিতাল), এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস (যেমন রিভার র্যাফটিং) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
উত্তরাখণ্ডের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির নাম জড়িত। চিপকো আন্দোলনের নেত্রী গৌরা দেবী, সুন্দরলাল বহুগুণা, জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার প্রাপ্ত সুমিত্রানন্দন পন্ত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।