ইয়াহিয়া সিনওয়ার: ফিলিস্তিনি রাজনীতির এক প্রভাবশালী নেতা
ইয়াহিয়া ইব্রাহিম হাসান সিনওয়ার (২৯ অক্টোবর ১৯৬২ - ১৬ অক্টোবর ২০২৪) ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ এবং হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। গাজা উপত্যকায় হামাসের সাবেক নেতা হিসেবে তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসমাইল হানিয়া থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সিনওয়ার হামাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
১৯৬২ সালে খান ইউনুসের একটি শরণার্থী শিবিরে সিনওয়ারের জন্ম হয়, যখন এটি মিশরের অধীনে ছিল। তার পরিবার ১৯৪৮ সালে আস্কালান থেকে গাজা উপত্যকায় স্থানান্তরিত হয়। খান ইউনিস সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর, তিনি গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং আরবি স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন ও গ্রেফতার:
১৯৮২ সালে নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্য প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন সিনওয়ার। ফারা কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তিনি সালাহ শেহাদাসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি কর্মীদের সাথে দেখা করেন এবং ফিলিস্তিনি মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ এবং ১৯৮৮ সালে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৮ সালে দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যা এবং চার ফিলিস্তিনি গুপ্তচর হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ২০০৮ সালে ইস্রায়েলের কারাগারে থাকাকালীন তাকে একটি টিউমার অপসারণের জন্য অপারেশন করা হয়। ২০১১ সালে ইস্রায়েলি সৈনিক গিলাদ শালিতের জন্য বন্দী বিনিময়ে মুক্তি পান।
হামাসের নেতৃত্ব:
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজা উপত্যকায় হামাসের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ইসমাইল হানিয়া থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ইস্রায়েলের সাথে যেকোনো পুনর্মিলন প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইস্রায়েলি সৈন্য বন্দী করার জন্য হামাস যোদ্ধাদের আহ্বান জানান। ২০১৮ সালে তিনি 'শান্তিপূর্ণ জনপ্রিয় প্রতিরোধ' অনুসরণের কথা জানান। ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য চার বছরের মেয়াদে হামাসের গাজা শাখার প্রধান নির্বাচিত হন। ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ৭ই আগস্ট ২০২৪ এ তাকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসী মনোনয়ন:
২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক সিনওয়ারকে সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করা হয়। হামাস এবং ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেডকেও বেশকিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।
মৃত্যু:
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৭ অক্টোবর ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত হন। এ তথ্য ১৮ অক্টোবর হামাস নিশ্চিত করেছে।