ইউরেনিয়াম

ইউরেনিয়াম: একটি বিস্তারিত আলোচনা

ইউরেনিয়াম (U) পর্যায় সারণীর ৯২তম মৌল, একটি রূপালী-ধূসর রঙের তেজস্ক্রিয় ধাতু। এর রাসায়নিক প্রতীক U এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৯২। প্রকৃতিতে এটি ইউরেনাইটসহ বিভিন্ন খনিজে পাওয়া যায়। ইউরেনিয়ামের দুটি প্রধান আইসোটোপ হল ইউরেনিয়াম-২৩৮ (৯৯% এর বেশি) এবং ইউরেনিয়াম-২৩৫ (কম পরিমাণে)। ইউরেনিয়াম-২৩৫ পারমাণবিক বিভাজন (ফিশন) এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার ফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়।

ইতিহাস:

১৭৮৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ মার্টিন হেনরিখ ক্ল্যাপ্রোথ প্রথম ইউরেনিয়াম আবিষ্কার করেন। তিনি নব আবিষ্কৃত গ্রহ ইউরেনাসের নামানুসারে এই মৌলের নামকরণ করেন। ১৮৪১ সালে ইউজিন-মেলচিওর পেলিগট প্রথম ইউরেনিয়াম ধাতুকে পৃথক করেন। ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকারেল ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। এরপর ১৯৩০-এর দশকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক শক্তি এবং অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষেপকৃত পারমাণবিক বোমার মধ্যে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল।

ব্যবহার:

ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানী হিসেবে। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর পারমাণবিক বিভাজন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ইউরেনিয়াম-২৩৮ পারমাণবিক চুল্লীতে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানী। এছাড়াও, ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম (ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম) সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও কিছু আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।

পরিবেশগত প্রভাব:

ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয় হওয়ার কারণে এর উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। রেডন গ্যাসের নির্গমন, মাটি এবং জলের দূষণ ইউরেনিয়ামের প্রধান পরিবেশগত ঝুঁকি। ইউরেনিয়াম খনির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।

উৎপাদন:

২০১৫ সালে কাজাখস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ ছিল। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করে।

বাংলাদেশে ইউরেনিয়াম:

বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন, যেখানে রাশিয়ার সহযোগিতায় ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এছাড়াও, বাংলাদেশে কিছু স্থানে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে, যদিও বাণিজ্যিক উত্তোলন এখনো শুরু হয়নি।

উপসংহার:

ইউরেনিয়াম একটি শক্তিশালী শক্তির উৎস, কিন্তু এর তেজস্ক্রিয়তা এবং পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই এবং নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইউরেনিয়ামের ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য।

মূল তথ্যাবলী:

  • ইউরেনিয়াম হল পর্যায় সারণীর ৯২তম মৌল এবং একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু।
  • ইউরেনিয়াম-২৩৫ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
  • ইউরেনিয়ামের উত্তোলন ও ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • কাজাখস্তান বিশ্বের প্রধান ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ।
  • বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন।