আয়েশা

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

আয়েশা (রাঃ): ইসলামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব

আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাঃ) ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর তৃতীয় স্ত্রী এবং একমাত্র কুমারী বিবাহিতা। ইসলামী ঐতিহ্যে তাঁকে 'উম্মুল মু'মিনিন' অর্থাৎ 'বিশ্বাসীদের মাতা' হিসেবে সম্মানিত করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায় তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করে। ইসলামের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর নামে ৫৮৭০ টি (মতান্তরে ২২১০ টি) হাদিস বর্ণিত আছে।

আয়েশা (রাঃ) ৬১৩ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে অথবা ৬১৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আবু বকর (রাঃ), যিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অন্যতম বিশ্বস্ত সাহাবী ছিলেন। মাতার নাম ছিল উম্মে রুমান বিনতে আমির।

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে আয়েশার (রাঃ) বিয়ে হয়েছিল প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর। সওদা (রাঃ)-কে বিয়ে করার পর মুহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। খাদিজার (রাঃ) মৃত্যুর পর বিয়ের ঘটনা বেশিরভাগ গবেষকই সমর্থন করেন। যদিও, হিজরতের দুই বা তিন বছর আগে বিয়ের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কিছু সূত্রে উল্লেখ আছে যে, সওদা (রাঃ)-কে বিয়ে করার আগেই মুহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন।

বিয়ের সময় আয়েশার (রাঃ) বয়স নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর। অপরদিকে সুন্নিদের হাদিস অনুসারে, বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৩-১৭ বছর। বদরের যুদ্ধের (৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) সময় নয় কিংবা দশ বছর বয়সে তাঁর বৈবাহিক জীবন শুরু হয়। তিনি তাঁর শৈশবকাল বিবাহের আগে পিতার বাড়িতেই অতিবাহিত করেন।

শিয়া পণ্ডিত আল-সাইয়দ জাফর মুর্তাযা আল-আমিলী (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর ৬-৭ বছর বয়সে বিয়ে করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাঁর মতে, বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ছিল ১৩-১৭ বছর।

খাদিজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত শোকাহত ছিলেন। আয়েশার (রাঃ) সাথে তাঁর বৈবাহিক জীবন তাঁকে সেই শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। আয়েশা (রাঃ) ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রী। অনেক হাদিসে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “এই জগতে আমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সে আয়েশা।” আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আয়েশার (রাঃ) কক্ষ মসজিদের দিকে মুখ করে নির্মিত ছিল। আয়েশা (রাঃ) একমাত্র নারী যিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সামনে থাকা অবস্থায় ওহী অবতরণের সাক্ষী ছিলেন। আয়েশা (রাঃ) ও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক ছিল উন্নত। মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে অনেক জ্ঞান ও আদর্শ দান করেছিলেন এবং অনেক সাহাবীকেই তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর কাছ থেকে ধর্মীয় বিধান শিক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কুরআনের সুরা নূর-এ আয়েশার (রাঃ) বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ ঘটনার পর ওহী অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে আয়েশার (রাঃ) সতীত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। অপবাদ রটনাকারীরা শাস্তি পায়।

মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিদিন আসরের নামাজের পর তাঁর স্ত্রীদের কক্ষ পরিদর্শন করতেন। জয়নব (রাঃ)-কে মধু খেতে দেখে মুহাম্মদ (সাঃ) সেখানে বেশি সময় কাটাতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) ক্ষুব্ধ হন এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর সূরা তাহরীমের আয়াত অবতীর্ণ হয়।

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর আয়েশা (রাঃ) আরও ১৫ বছর মদিনায় বসবাস করেন। তিনি কুরআন ও মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অধ্যয়নে সময় ব্যয় করতেন।

আবু বকর (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হলে আয়েশা (রাঃ) মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রী ও খলিফার কন্যা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণ তাঁকে 'সিদ্দিকা বিনতু সিদ্দিক' বলে ডাকত। তিনি রাজনৈতিক বিষয়েও মতামত দিতেন।

উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের সময়ও আয়েশা (রাঃ)-এর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। উসমান (রাঃ)-এর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

উসমান (রাঃ)-এর হত্যার পর আয়েশা (রাঃ) আলী (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যা 'জামালের যুদ্ধ' বা 'উটের যুদ্ধ' নামে পরিচিত।

আয়েশা (রাঃ) ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কুরআন মুখস্থকারী তিনজন স্ত্রীর একজন।

আয়েশা (রাঃ) ৫৮ হিজরী সনের ১৭ রমজান (১৬ই জুলাই, ৬৭৮ খ্রিস্টাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স ছিল ৬৮ বছর।

আয়েশা (রাঃ) ইসলামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • আয়েশা (রাঃ) ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন।
  • তাঁকে 'উম্মুল মু'মিনিন' বলা হয়।
  • তার নামে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত আছে।
  • তিনি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয়তম স্ত্রী ছিলেন।
  • তিনি ইসলামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
  • জামালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
  • তিনি ৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - আয়েশা

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আয়েশা নামের একজন নারী নতুন স্টুডিওটি ব্যবহার করে খুশি।