আহসান হাবীব (২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ - ১০ জুলাই ১৯৮৫) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে তিনি পরিচিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ১৯৭৮ সালে একুশে পদক এবং মরণোত্তর ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
আহসান হাবীবের জন্ম পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে। পিতা হামিজুদ্দীন হাওলাদার এবং মাতা জমিলা খাতুন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও সাহিত্যের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে ভর্তি হন। অর্থনৈতিক কারণে অসমাপ্ত রেখে তিনি ১৯৩৬ সালে কাজের সন্ধানে কলকাতায় চলে যান।
কলকাতায় তিনি দৈনিক তকবির, বুলবুল, মাসিক সওগাত-এর মতো পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) এবং দুই পুত্র (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের)। পুত্র সাবের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং দিব্যপ্রকাশ প্রকাশনীর কর্ণধার।
১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তার প্রথম প্রবন্ধ ‘ধর্ম’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ সালে ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’ কবিতা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে দেশ, মাসিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে ‘রাত্রিশেষ’ তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, দুহাতে দু আদিম পাথর, প্রেমের কবিতা, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। অরণ্য নীলিমা ও রাণীখালের সাঁকো তার দুটি বিখ্যাত উপন্যাস। জ্যোৎস্না রাতের গল্প, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, ছুটির দিন দুপুরে তার উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ।
আহসান হাবীবের কবিতায় মধ্যবিত্তের সংকট, সামাজিক বাস্তবতা, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংগ্রামী চেতনা ও যুগযন্ত্রণা প্রতিফলিত হয়। ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।