আলেকজান্দ্রিয়া (গ্রিক: Αλεξάνδρεια, কপ্টিক: Rakotə, আরবি: الإسكندرية আল ইস্কান্দারিয়া) মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। উত্তর-পশ্চিম মিশরে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই শহরটি প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। বিখ্যাত গ্রন্থাগার বিবলিওথেকা আলেক্সান্দ্রিয়া এই শহরে অবস্থিত। সুয়েজ হয়ে আসা প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের পাইপলাইনের সাথে যুক্ত হওয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র। মিশরে এই ধরণের শহরকে মুহাফাজা বলা হয়।
প্রাচীনকালে আলেকজান্দ্রিয়া বাতিঘর (প্রাচীন বিশ্বের সাত আশ্চর্যের একটি) এবং বিশাল গ্রন্থাগার (প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার) এর জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় সামুদ্রিক নৃবিজ্ঞান গবেষণা আলেকজান্ডারের আগমনের পূর্বে রাকোটিস নামে পরিচিত এই শহর এবং টলেমীয় রাজত্বের সময়ের আলেকজান্দ্রিয়া সম্পর্কে নতুন তথ্য উদ্ঘাটন করেছে।
মহান আলেকজান্ডার ৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। সঠিক তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। নগরী নির্মাণে রোডসের ডাইনোক্রেটস আলেকজান্ডারের প্রধান স্থপতি ছিলেন। প্রাচীন বর্ণনাগুলি জটিল এবং বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত। ইতিহাসবেত্তা অ্যারিয়ানের বর্ণনা থেকে শহর তৈরির আলেকজান্ডারের প্রাথমিক পরিকল্পনা জানা যায়। আলেকজান্ডারের ভবিষ্যৎ দ্রষ্টারা, বিশেষ করে টেলমেসাসের অ্যারিস্টান্ডার, শহরের ব্যাপক উন্নতি, বিশেষ করে শস্য উৎপাদনের দিক থেকে ত্বরান্বিত হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
আলেকজান্দ্রিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমানে বন্ধ) এবং বোরগ এল আরব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (শহর কেন্দ্র থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে) শহরকে বিমান পরিষেবা প্রদান করে। ২০১১ সালের শেষের দিকে, বোরগ এল আরব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ান পরিষেবা স্থানান্তরের জন্য এবং আলেকজান্দ্রিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের জন্য দুই বছরের জন্য এটি বন্ধ ছিল। একটি নতুন টার্মিনাল ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১৭ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে, আলেকজান্দ্রিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বন্ধ থাকবে।
আলেকজান্দ্রিয়ার পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল রোড, কায়রো-আলেকজান্দ্রিয়া ডেজার্ট রোড, কায়রো-আলেকজান্দ্রিয়া কৃষি সড়ক এবং মেহেরর এল তামের। ইনট্রাসিটি কমিউটার রেল ব্যবস্থা মিশর স্টেশন থেকে আবু কীর পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরে দুটি আন্তঃনগর রেলস্টেশন রয়েছে: মিশর স্টেশন এবং সিদি গাবের রেলওয়ে স্টেশন। ১৮৬০ সালে নির্মিত ট্রামওয়ে নেটওয়ার্ক আফ্রিকার প্রাচীনতম।
আলেকজান্দ্রিয়ার চারটি বন্দর রয়েছে: পশ্চিম বন্দর (দেশের প্রধান বন্দর), ডেখলা বন্দর, পূর্ব বন্দর (ইয়টিং আশ্রয়) এবং আবু কীর বন্দর (বাণিজ্যিক বন্দর)।