আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা: একটি বহুমুখী উপজেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক উপজেলা হল আলমডাঙ্গা। ৩৬৪.৬৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৩°৩৭´ থেকে ২৩°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭´ থেকে ৮৯°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা: আলমডাঙ্গার উত্তরে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা, পূর্বে কুষ্টিয়া সদর ও ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু এবং পশ্চিমে মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলা অবস্থিত। কুমার ও নবগঙ্গা নদী এই উপজেলার প্রধান নদী।
জনসংখ্যা ও গোষ্ঠীগত বিভাজন: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আলমডাঙ্গার জনসংখ্যা ৩৪৫৯২২; যার মধ্যে পুরুষ ১৭২৯৩২ এবং মহিলা ১৭২৯৯০। ধর্মীয়ভাবে, ৩৩৬৭১৫ জন মুসলমান, ৯০৫০ জন হিন্দু এবং অন্যান্য ১৫৭ জন।
প্রশাসনিক ইতিহাস: ১৯৮২ সালে আলমডাঙ্গা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
ঐতিহাসিক ঘটনা: আঠারো শতকে নীল চাষের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিদ্রোহে আলমডাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কৃষকদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও আলমডাঙ্গা বীরত্বের সাক্ষী ছিল। বালিয়াপুর, বেনাগাড়ি, সুচকা-বাজিতপুর, হাটবোয়ালীয়া, এনায়েতপুর, বাড়াদি, নীলমনিগঞ্জ, পাইকপাড়া, অনুপনগর ও কালিলাদহ প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। একটি গণকবর আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের কাছে আবিষ্কৃত হয়েছে।
প্রাচীন নিদর্শন: ঘোলদাড়ি মসজিদ (নাগদহ), তিয়রবিলা মসজিদ (খাসকড়া), জমজমি মসজিদ, বাদেমাজু মসজিদ, সোনাতনপুর মন্দির, এবং ঘোলদাড়ি নীলকুঠি উল্লেখযোগ্য।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: আলমডাঙ্গার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষি ৪১.৭৬%, কৃষি শ্রমিক ২৭.৩৫% জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস। ধান, পাট, গম, আখ, ডাল, আলু, ভুট্টা, ছোলা, তামাক, সুপারি এবং পান প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা প্রধান ফল। চিনিকল, ময়দাকল, ধানকল, চিড়াকল, করাতকল ও বরফকল প্রভৃতি শিল্প কার্যকলাপ রয়েছে। তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ ও বেতের কাজ গুরুত্বপূর্ণ কুটিরশিল্প। ২৪টি হাটবাজার এবং ২টি মেলা আছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: আলমডাঙ্গার গড় শিক্ষার হার ৪৫.৭%। আলমডাঙ্গা কলেজ (১৯৬৫), এম এস জোহা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), আলমডাঙ্গা বহুমুখী (পাইলট) মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি এবং ১৪টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে।
যোগাযোগ: ৩০৫ কিমি পাকা রাস্তা, ৪৭ কিমি আধাপাকা রাস্তা, ৪৮৪ কিমি কাঁচা রাস্তা এবং ১৯ কিমি রেলপথ আছে। ১০ কিমি নৌপথও আছে।
বিদ্যুৎ ও পানি: এ উপজেলার সব ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। ৫৯.৭% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। নলকূপ প্রধান পানির উৎস। নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি একটি চ্যালেঞ্জ।
স্যানিটেশন: ৩৯.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫২.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং ৭.৩% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
এনজিও: ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, সজাগ, সৃজনী সহ আরো অনেক এনজিও আলমডাঙ্গায় কাজ করছে।
উল্লেখ্য: উপরোক্ত তথ্য আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আলমডাঙ্গা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। অধিক তথ্যের জন্য আলমডাঙ্গা উপজেলার সরকারী ওয়েবসাইট দেখা যেতে পারে।