প্যারিসের বাউল: আরিফ রানার সঙ্গীত যাত্রা
খুলনায় জন্মগ্রহণকারী আরিফ রানা বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাসরত একজন প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি বিভিন্ন ধরণের গান গায়, তবে বাউল সংগীতে তার গভীর অনুরাগ রয়েছে। প্যারিসের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাউল সংগীতকে তিনি নিরলসভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ভারতীয় শিল্পী পবন দাশ বাউলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি প্যারিস এবং ইউরোপের শ্রোতাদের কাছে বাউল সংগীতের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। আরিফ রানার প্রচেষ্টার ফলে পূর্বে বাউল সংগীত সম্পর্কে অজ্ঞ ইউরোপীয় শ্রোতাদের মনে এখন এর প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, শুধু প্যারিস নয়, ইউরোপের বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বাউল গানের প্রসার ঘটাচ্ছেন। এমনকি একটি ফরাসি চলচ্চিত্রেও তার একটি বাংলা গান ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে এসে দ্য রিপোর্টের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তার সঙ্গীত জীবন, প্যারিসে বসবাস, এবং দুটি নতুন অ্যালবাম প্রকাশের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, তার তৃতীয় একক অ্যালবামটিতে জ্যাজ, ল্যাটিন সহ নানা ধরণের স্বাদের মিশ্রণ থাকবে। এছাড়াও, তার স্ত্রী কুমকুমের একক অ্যালবাম ‘আমার আমি’ শিঘ্রই বাজারে আসবে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি, কারণ দেশের মানুষের প্রতি তার আন্তরিকতা এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, সঙ্গীতের মাধ্যমে একটি নতুন পথ তৈরি করা সম্ভব এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে ‘মাইগ্রেশন মিউজিক’ একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে।
আরিফ রানা তার সঙ্গীত জীবনের শুরুতে প্যারিসে বিভিন্ন বারে ইংরেজি গান গেয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন শ্রোতারা বাংলা গান, বিশেষ করে বাউল গানে বেশি আগ্রহী। পবন দাশ বাউলের কাছ থেকে একটি দোতারা পেয়ে তিনি বাউল গান গাওয়া শুরু করেন। ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষার স্বীকৃতির বর্ষে প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তিনি বাউল গান পরিবেশন করেছিলেন। তিনি বর্তমান বাংলা গানের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, নতুনত্বের পাশাপাশি পুরোনো গানের দিকে ফিরে তাকানো প্রয়োজন।
প্যারিসের সংগীতের সাথে বাংলাদেশের সংগীতের তুলনায় তিনি উল্লেখ করেন যে, প্যারিসে বিভিন্ন ধরণের সংগীতের একটি সমন্বয় রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট ধারায় সবাই ঝুঁকে পড়ে। তিনি মনে করেন দেশীয় শিল্পীদের বিদেশে তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন। প্যারিস হামলার সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি ঘটনার ভয়াবহতা ও তার প্রভাবের কথা তুলে ধরেন। শেষে দ্য রিপোর্ট কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার আলাপচারিতা শেষ করেন।
কাজী জহিরুল ইসলামের ‘দেহকাব্যের গান’ এ আরিফ রানার সুর ও কণ্ঠ