আরবি ভাষা: একটি বিশদ আলোচনা
আরবি ভাষা (العَرَبِيَّة [al ʕaraˈbijːa] (শুনুনⓘ), আল্-ʿআরাবিয়্যাহ্ বা عَرَبِيّ ʻআরাবি) সেমেটিক ভাষা পরিবারের জীবন্ত সদস্যদের মধ্যে বৃহত্তম। এটি একটি কেন্দ্রীয় সেমেটীয় ভাষা, হিব্রু ও আরামীয় ভাষার সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক আরবিকে 'ম্যাক্রো ভাষা' বলা হয়; এর ২৭ টি উপভাষা ISO 639-3 তে স্বীকৃত।
আরবি ভাষার উৎপত্তি ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই আরব উপদ্বীপে। প্রাক-ইসলামী যুগের আরব কবিরা উচ্চমানের আরবি ব্যবহার করতেন, তাদের কবিতা মুখে মুখে প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা সহজ ছিল এবং এখনো তা সম্ভব।
ইসলামের প্রচারের সাথে ৭ম শতাব্দীতে আরব সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে, প্রথমে দামেস্ক, পরে বাগদাদ রাজধানী হয়। ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হত। বাইজেন্টীয় গ্রিক ও ফার্সি ভাষা থেকে শব্দ ধার করে আরবি আরও সমৃদ্ধ হয়।
৯ম ও ১০ম শতকে বাগদাদে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন চরমে ওঠে। গ্রিক ভাষার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখা আরবিতে অনুবাদ করা হয়, আরবি চিন্তাবিদরা নিজস্ব চিন্তা সংযোজন করেন। এই জ্ঞানচর্চা ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ও রেনেসাঁসের সূচনা করে। আরবি ১১শ শতকে মানব জ্ঞানের বাহক ভাষা ছিল, প্রাচীন গ্রিক ও লাতিনের উত্তরাধিকারী।
আরব সভ্যতা শুধু আরব জাতি বা ইসলামকে বোঝায় না, বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষকে আকর্ষণ করেছিল এ ভাষা। বিশাল আরব সাম্রাজ্যের নানা জাতির মানুষ আরবির ছত্রছায়া একত্রিত হয়েছিল। ৮ম থেকে ১২শ শতক পর্যন্ত সংস্কৃতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের সার্বজনীন ভাষা ছিল আরবি।
আরবি সেমেটিক ভাষার অন্তর্গত। অন্যান্য জীবন্ত সেমেটিক ভাষার মধ্যে আছে আধুনিক হিব্রু (ইসরাইল), আমহারিক (ইথিওপিয়া) এবং ইথিওপিয়ার অন্যান্য ভাষা। মৃত সেমেটিক ভাষার মধ্যে আছে প্রাচীন হিব্রু (তাওরাত), আক্কাদীয় (ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়), সিরীয় এবং ইথিওপীয়।
সকল সেমেটিক ভাষার একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল ব্যঞ্জন দিয়ে গঠিত ধাতু (শব্দমূল)। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটি মূল গঠিত হয়, এবং বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে (স্বরবর্ণ যোগ, উপসর্গ-মধ্যসর্গ-অন্ত্যপ্রত্যয় বসিয়ে) অন্যান্য শব্দ সৃষ্টি করা হয়।
আরবিকে সাধারণত তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: ধ্রুপদী আরবি (কুরআন), আধুনিক লেখ্য আরবি (সংবাদপত্র, সাহিত্য) এবং আধুনিক কথ্য বা চলিত আরবি।
আরবি লিপি ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়। ২৯টি বর্ণের এই লিপিতে কেবল ব্যঞ্জন ও দীর্ঘ স্বর নির্দেশ করা হয়। বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর নেই।