আম্বেদকর

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

ডঃ ভীমরাও রামজী আম্বেদকর: একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জীবনী

ডঃ ভীমরাও রামজী আম্বেদকর, যিনি বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও পরিচিত, ভারতের ইতিহাসের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং দলিত অধিকার আন্দোলনের একজন অগ্রণী নেতা। তার অসাধারণ জীবন ও অবদানের কথা এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মহুতে (বর্তমানে ডঃ আম্বেদকর নগর) এক দরিদ্র মাহার পরিবারে (যা তখন অস্পৃশ্য হিসাবে বিবেচিত হত) জন্মগ্রহণ করেন আম্বেদকর। তার পিতার নাম রামজী সকপাল এবং মাতার নাম ভীমা বাঈ। জন্মগত বৈষম্য ও সামাজিক বঞ্চনার মধ্য দিয়ে তার শৈশব কেটেছে। অনেক কষ্টের মধ্যেও তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। ১৯০৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯১২ সালে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বরোদার গায়েকওয়াদের বৃত্তি পেয়ে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেন। ১৯২৩ সালে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৭ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

সামাজিক সংস্কার ও রাজনৈতিক কর্ম:

শিক্ষা লাভের পর আম্বেদকর সক্রিয়ভাবে দলিত অধিকার আন্দোলনে যোগ দেন। অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সারা ভারতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ১৯২৭ সালে তিনি অস্পৃশ্যদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা ও মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৩০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন এবং অস্পৃশ্যদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর দাবী তোলেন। ১৯৩২ সালের দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেন। এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে মহাত্মা গান্ধীর অনশন হয় এবং পরবর্তীতে পুনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৩৬ সালে তিনি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারতীয় সংবিধান রচনায় ভূমিকা:

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে আম্বেদকরকে ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তিনি ভারতের সংবিধান খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ভারতের সংবিধান রচনায় অতুলনীয় অবদান রাখেন। সংবিধানে মৌলিক অধিকার, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ধারণা স্থাপনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ ও পরবর্তী জীবন:

আম্বেদকর বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি গভীর আগ্রহ পোষণ করতেন এবং পরবর্তীতে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ‘বুদ্ধ অ্যান্ড হিজ ধর্ম’ নামক বই রচনা করেন।

মৃত্যু:

৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সালে দিল্লিতে মৃত্যুবরণ করেন ডঃ আম্বেদকর। তার মৃত্যুতে ভারত একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হারিয়েছে।

স্বীকৃতি ও সম্মাননা:

ডঃ আম্বেদকরকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তার জন্মদিন ১৪ এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। তার সম্মানে বহু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মহুতে জন্ম।
  • ১৯১২ সালে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি।
  • ১৯২৩ ও ১৯২৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি।
  • দলিত অধিকার আন্দোলনের অগ্রণী নেতা।
  • ভারতীয় সংবিধান রচনায় অতুলনীয় অবদান।
  • ১৯৯০ সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন।
  • ১৪ এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।