"
আপেল: স্বাস্থ্যকর জীবনের এক অংশ
আপেল, রোসাসি (Rosaceae) পরিবারের ম্যালিয়াস ডমেস্টিকা (Malus domestica) প্রজাতির একটি ফল। মিষ্টি স্বাদের জন্য এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। মধ্য এশিয়া আপেলের উৎপত্তিস্থল বলে মনে করা হয়, যেখানে ম্যালুস সিভেরসিকে (Malus sieversii) নামে এর বন্য পূর্বপুরুষ এখনও পাওয়া যায়। হাজার বছর ধরে এশিয়া ও ইউরোপে আপেল চাষ হয়ে আসছে। ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকায়ও এর প্রসার ঘটে। নর্স, গ্রীক, ও খ্রিস্টান ঐতিহ্যসহ অনেক সংস্কৃতিতে আপেলের ধর্মীয় ও পৌরাণিক তাৎপর্য রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ও চাষাবাদ:
আপেল গাছ সাধারণত 2 থেকে 4.5 মিটার উঁচু হয়, বন্য প্রজাতি 9 মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। চাষাবাদের সময় ছাঁটাই করে আকার ও আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাতা ডিম্বাকার, সবুজ, বাঁকা মার্জিন বিশিষ্ট। বসন্তে পাতার সাথে ফুল ফোটে, যা গোলাপী থেকে সাদা রঙের হয়। গ্রীষ্মের শেষে ও শরৎকালে ফল পাকে, 5-8 সেমি ব্যাসের। 7,500 টির বেশি আপেলের জাত রয়েছে। গাছের জন্ম সাধারণত কলম করে করা হয়।
উৎপত্তি এবং ইতিহাস:
কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান, ও চীনের তিয়ান শান পর্বতমালার বনভূমিতে ম্যালুস সিভেরসি বন্যভাবে জন্মে। হাজার বছর আগে সেখান থেকেই আপেলের চাষ শুরু হয়। আলেকজান্ডার দি গ্রেট 328 খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাজাখস্তানে এই আপেলের সাথে পরিচিত হন বলে ধারণা করা হয়।
জিনোম ও বৈশিষ্ট্য:
আপেল ডিপ্লয়েড (যদিও ট্রিপলয়েডও অস্বাভাবিক নয়), 17টি ক্রোমোজোম এবং প্রায় 650 Mb জিনোম আকার বিশিষ্ট। ২০১০ সালে 'গোল্ডেন ডিলিশিয়াস' জাতের জিনোম ক্রম নির্ণয় করা হয়।
পরাগায়ন ও সংরক্ষণ:
আপেলের পরাগায়ন ক্রস-পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল। মৌমাছি প্রধান পরাগায়ক। বাণিজ্যিকভাবে ফলন বাড়াতে ইথিলিন ও নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। আপেল সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইড ও উচ্চ বায়ুচাপযুক্ত চেম্বারে সংরক্ষণ করা হয়।
উৎপাদন এবং পুষ্টিগুণ:
২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী ৮১.১ মিলিয়ন টন আপেল উৎপাদন হয়, চীন ৫০% এবং ইউরোপ ১৭% উৎপাদন করে। আপেলে প্রায় ৮০% পানি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ থাকে।
ব্যবহার ও স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব:
আপেল কাঁচা খাওয়া হয়, রস ও মাখন তৈরি করা হয়, রান্নায় ব্যবহার হয়। ত্বক ও বীজে বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল ও পলিফেনল রয়েছে। স্বাস্থ্যগত সুফলগুলোর জন্য এগুলি গবেষণাধীন। আর্টিক আপেল হল একটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত জাত, যাতে বাদামী রং হওয়ার প্রবণতা কম। আপেল এলার্জিও দেখা যায়, বিশেষ করে বার্চ-আপেল সিন্ড্রোম হিসেবে।
উপসংহার:
আপেল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের খাদ্যতালিকার এক অংশ। এটির পুষ্টিগুন ও স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব বিশাল। তবে, অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।"