আতিউর রহমান: বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
আতিউর রহমান (জন্ম: ৩ আগস্ট, ১৯৫১) একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং ব্যাংকার। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ম গভর্নর ছিলেন। তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের জন্য তাকে ‘গরিবদের ব্যাংকার’ বলা হয়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
আতিউর রহমান জামালপুর জেলার দিগপাইত ইউনিয়নের পূর্বপাড় দিঘুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন ভূমিহীন কৃষক ছিলেন এবং তিনি কোনও শিক্ষা লাভ করেন নি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আতিউর রহমান তৃতীয় শ্রেণীর পরে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে, তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়ে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে BSS ও MSS ডিগ্রি লাভ করেন এবং লন্ডনের SOAS বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তার গবেষণা প্রবন্ধ ‘Peasants and Classes’ নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন:
আতিউর রহমান ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ নামে একটি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে প্রায় ২৮ বছর কাজ করার পর ২০০৬ সালে সিনিয়র গবেষণা সহকারী পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক এবং ২০০১ সালে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর:
২৯শে এপ্রিল, ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ম গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান এবং জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চারগুণ বৃদ্ধি পায়। তিনি জাতীয় পেমেন্ট সুইচ স্থাপন, মোবাইল ব্যাংকিং চালু, বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (BEFTN) প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (BACH) স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ন্যূইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির ঘটনার পর তিনি পদত্যাগ করেন।
অন্যান্য অবদান:
আতিউর রহমান দারিদ্র্য বিমোচন, জনসাধারণের ব্যয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। তিনি ৪৫টিরও বেশি বই প্রকাশ করেছেন। তিনি মুহম্মদ ইউনুসের দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সেও কাজ করেছেন।
বর্তমানে:
বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ হিসেবে কর্মরত আছেন এবং ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।