অমীয় কুমার মল্লিক

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৩ এএম

পঙ্কজ কুমার মল্লিক (১০ মে, ১৯০৫ - ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং অভিনেতা। তিনি বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের এক অগ্রণী সঙ্গীত পরিচালক এবং নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। রবীন্দ্রসংগীতেও তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।

১৯০৫ সালের ১০ মে কলকাতার মানিকতলায় অবস্থিত চালতা বাগানে এক বৈষ্ণব পরিবারে পঙ্কজ কুমার মল্লিকের জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল মণিমোহন মল্লিক এবং মাতার নাম ছিল মনোমোহিনী দেবী। তার পিতার সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল এবং তাই তাঁর বাড়িতে প্রায়ই নামকরা ধর্মীয় সঙ্গীতশিল্পীদের আসর বসত। বাল্যকাল থেকেই পঙ্কজ কুমার মার্গসংগীত ও টপ্পা জাতীয় গান শিখতেন। দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে পরিচয়ের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর মধুর কন্ঠের কারণে তিনি রবীন্দ্রনাথের স্নেহ অর্জন করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রবীন্দ্রসংগীতের একজন অগ্রণী শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। অর্থের লোভ এড়িয়ে তিনি কেবলমাত্র সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ নিয়ে ছিলেন, যার ফলে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি।

১৯২৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে পঙ্কজ কুমার ‘নেমেছে আজ প্রথম বাদল’ গানটি ভিয়েলোফোন কোম্পানি থেকে রেকর্ড করেন। ১৯২৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথম বেতারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি গান গান, যা তার সঙ্গীত জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯৩২ সালে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড হয়।

পঙ্কজ কুমার রবীন্দ্রসংগীতকে আত্মার আত্মীয় মনে করতেন এবং তিনি রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করার কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ‘শেষ খেয়া’ কবিতাটিতে তিনি সুর সংযোজন করে নিজের কণ্ঠে গানটি গেয়েছিলেন, যা আজও অত্যন্ত জনপ্রিয়। ‘মুক্তি’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গানে সুরারোপ করেন।

১৯২৭ সাল থেকে কলকাতার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও, বর্তমানে আকাশবাণী কলকাতা) এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। রাইচাঁদ বড়াল তাঁর সহকর্মী ছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি ‘সংগীত শিক্ষার আসর’ নামে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেন, যেখানে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান শেখানো হতো।

১৯৩১ সাল থেকে ৩৮ বছর ধরে বাংলা, হিন্দি, উর্দু এবং তামিল চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেন এবং কুন্দন লাল সায়গল, শচীন দেব বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, আশা ভোঁসলে প্রমুখ শিল্পীদের সাথে কাজ করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। নীতীন বসু ও রাইচাঁদ বড়ালের সাথে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠ সংগীতের প্রবর্তন করেন। নিউ থিয়েটার্সের সাথে ২৫ বছর কাজ করেন।

পঙ্কজ কুমার মল্লিক ১৯৭০ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৭২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৬ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভারতীয় ডাক বিভাগ একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

১৯৭৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় পঙ্কজ কুমার মল্লিকের মৃত্যু হয়। তার স্মৃতি সঙ্গীত জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯০৫ সালে কলকাতায় জন্ম।
  • প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক।
  • বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদান।
  • পদ্মশ্রী ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ।
  • ১৯৭৮ সালে মৃত্যু।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - অমীয় কুমার মল্লিক

২ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম

অমীয় কুমার মল্লিক সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে ৫২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলার আসামি।