২০১৯ সাল: বাংলাদেশের এক ঝলক
২০১৯ সাল বাংলাদেশের জন্য ছিল ঘটনাবহুল এক বছর। এই বছর রাজনীতি, দুর্ঘটনা, অপরাধ, এবং সামাজিক আন্দোলনের এক অদ্ভুত মিশ্রণে ভরপুর ছিল। বছরটি শুরু হয় প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে, যেখানে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা ৭ই জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
এই বছরের প্রাথমিক দিকে ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং এর পেছনে রাসায়নিক গুদামের অপরিকল্পিত স্থাপনার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
২০১৯ সাল দুটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছে। ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির উপর অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকার বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলে। উভয় ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবীতে দেশব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত হয়।
এই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনেও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা নুরুল হক ডাকসু'র ভিপি নির্বাচিত হন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক মাত্রা যোগ করে। পরবর্তীকালে নুরুল হকের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
২০১৯ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়, যা যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটায়। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ও এর ফলে সৃষ্ট জনজীবনে বিপর্যয়ও এই বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে অন্যতম।
বছরের শেষ দিকে রাজাকারের তালিকা প্রকাশে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় থাকার কারণে এটি দেশজুড়ে তোলপাড় তৈরি করে এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তালিকা স্থগিত হয়।
২০১৯ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ঘটনাও ঘটে। জাতিসংঘ ২০১৯ সালকে 'আন্তর্জাতিক পর্যায় সারণী বর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়াও, প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক সংবাদও পাওয়া যায়।
এই বছর বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যক মানুষ পরিবেশ দূষণজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।