হোসাইন আহমদ মাদানী (৬ অক্টোবর ১৮৭৯ - ৫ ডিসেম্বর ১৯৫৭) ছিলেন উনিশ-বিংশ শতাব্দীর ভারতের একজন বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, সুফি, লেখক ও ইসলামি পণ্ডিত। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, খিলাফত আন্দোলন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ১৯২০ সালে কংগ্রেস-খিলাফত জোট তৈরিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯২০-১৯৩০ সাল জুড়ে তিনি তার বক্তৃতা ও পুস্তক প্রকাশের মাধ্যমে ভারতীয় উলামা ও কংগ্রেসের যৌথ আন্দোলনের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তিনি ভারত ভাগ, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিপক্ষে ছিলেন এবং সংযুক্ত ভারতের অভ্যন্তরে সম্মিলিত জাতীয়তাবাদের পক্ষে ছিলেন। রাষ্ট্র গঠনের জন্য আঞ্চলিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কে পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। তিনি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি এবং দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস ছিলেন। তার সময়কালে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাক্রম আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। তিনি দেওবন্দ আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সমাদৃত। ইসলামি শাস্ত্রে তার পাণ্ডিত্য ও অবদানের জন্য তাকে শায়খুল ইসলাম উপাধি দ্বারা সম্বোধন করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে। ভারতের এই তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননায় যাদেরকে প্রথম ভূষিত করা হয়েছিল তিনি তাদের অন্যতম। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় ডাক বিভাগ তার সম্মানে একটি স্মারক ডাকটিকিট বের করেছে। তিনি উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার বাঙ্গারমৌ মৌজায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৮৯২ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। মাহমুদ হাসান দেওবন্দির তত্ত্বাবধানে তিনি ইসলামি শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মদিনায় ১৮ বছর শিক্ষকতা করার কারণে তাকে ‘শায়খুল হারাম’ বলা হয়। ১৯১৫ সালে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি মদিনায় আসলে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯১৬ সালে মক্কার শরিফ হুসাইন বিন আলির বিদ্রোহের কারণে দেওবন্দি গ্রেফতার হয়ে মাল্টায় নির্বাসিত হন। মাদানি স্বেচ্ছায় তার সাথে কারাবরণ করেন। ১৯২০ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি দেওবন্দির সাথে ভারতে চলে আসেন এবং কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। দেওবন্দির মৃত্যুর পর তিনি তার উত্তরসূরি হন এবং ‘জানাশীনে শায়খুল হিন্দ’ উপাধি পান। ১৯২১ সালে করাচিতে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরি করা হারাম ঘোষণা করেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে সদরুল মুদাররিসের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং মাজারে কাসেমিতে দাফন করা হয়। ২০১৯ সালে সিলেটে তার স্মৃতি বিজড়িত স্থানে মাদানি চত্বর নির্মিত হয়েছে।
হোসাইন আহমদ
মূল তথ্যাবলী:
- হোসাইন আহমদ মাদানী ছিলেন একজন বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত ও সুফি।
- তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
- তিনি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস ছিলেন।
- তিনি ভারত ভাগের বিরোধী ছিলেন এবং অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন।
- তাকে শিক্ষা ও ইসলামি শাস্ত্রে অবদানের জন্য শায়খুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।