হৃদরোগ: একটি বিস্তারিত আলোচনা
হৃদরোগ হৃৎপিণ্ড ও রক্তবাহী নালীর (ধমনী, শিরা ও কৈশিক) বিভিন্ন রোগের সমষ্টি। এটি মূলত হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনীকে আক্রান্ত করে। উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হৃদরোগের প্রধান কারণ। বয়সের সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও কার্যকরী পরিবর্তনও এতে ভূমিকা পালন করে। উন্নত দেশে ১৯৭০ সালের পর থেকে মৃত্যুহার কমলেও, বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে এর প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও হৃদরোগ প্রধানত প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত করে, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস অনেক আগেই শুরু হতে পারে। তাই পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান পরিহারের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ:
হৃদরোগের জন্য বয়স, লিঙ্গ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ এবং বায়ু দূষণ দায়ী। জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন, ঔষধ সেবন এবং উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
বয়সের ভূমিকা:
বয়স হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। ৬৫ বছরের অধিক বয়সীদের ৮২% হৃদরোগে মারা যান। ৫৫ বছরের পর স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। বয়সের সাথে সিরাম কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, যা রক্তবাহী নালীর গঠনে পরিবর্তন আনে ও ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
লিঙ্গের প্রভাব:
পুরুষদের তুলনায় নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে, তবে প্রজনন সময় শেষ হওয়ার পর এ ঝুঁকি বেড়ে পুরুষের সমান হয়। ডায়াবেটিস থাকলে নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী পুরুষদের করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় ২ থেকে ৫ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, হৃদরোগে মৃত্যুহার নির্ধারণে লিঙ্গের ভূমিকা প্রায় ৪০%। হরমোনের পার্থক্য, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের প্রভাব এতে দায়ী।
শৈশব থেকেই শুরু:
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, হৃদরোগের পূর্বসূরী, শৈশব থেকেই শুরু হতে পারে। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের জটিলতায় প্রতি তিন জনে একজন মারা যান।
অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান:
স্থূলতা ও ডায়াবেটিস হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত এবং ক্রনিক কিডনি রোগেরও ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত হৃদরোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ।
লক্ষণ:
হৃদরোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব ও পরিসংখ্যান:
হৃদরোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ৩০% এর জন্য হৃদরোগ দায়ী ছিল। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে ৮০% মৃত্যুর জন্য হৃদরোগ দায়ী। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর হৃদরোগে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবে। WHO এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান।