ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা: একটি বিশ্লেষণ
ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাতের মূল কারণ হলো হুথি বিদ্রোহীরা। এই গোষ্ঠীটি, যাদের আনুষ্ঠানিক নাম "আনসারুল্লাহ" (আল্লাহর সমর্থক), একটি শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন। ২০০৪ সালে হুসেন আল-হুথির মৃত্যুর পর থেকে তার ভাই আব্দুল মালিক আল-হুথি সহ অন্যান্য নেতারা এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। প্রধানত উত্তর ইয়েমেনের জায়দি শিয়া সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে ইয়েমেনের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথি বিদ্রোহের উত্থান:
হুথি আন্দোলনের উত্থান ১৯৯০ এর দশকে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে ঘটে। আলি আবদুল্লাহ সালেহর শাসনামলে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রান্তিককরণ ও সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সালেহের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরোধিতা করে হুথিরা বিদ্রোহ শুরু করে। ২০০৪ সালে হুসেন আল-হুথি ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে মারা যান এবং তার মৃত্যু এই আন্দোলনকে আরও উস্কে দিয়েছিল।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সংঘাত:
২০১৪ সালে হুথিরা ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আব্দে-রাব্বু মনসুর হাদিকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং সানা দখল করে। এই ঘটনার পর সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক জোট হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। এই সংঘাত বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের বিচরণ হয়েছে।
হুথিদের কর্মকাণ্ড:
হুথিরা সৌদি আরবে এবং যুক্তরাজ্যে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে যার মধ্যে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং চালকবিহীন জাহাজ (ইউএসভি) উল্লেখযোগ্য। তারা দাবি করে আসছে যে এই হামলাগুলি গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে চালানো হচ্ছে। তবে তাদের এই দাবিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ স্বীকার করে না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
হুথিদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন দেশ হুথিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রেরণ বন্ধ করার এবং শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত শেষ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
উপসংহার:
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহ একটি জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাত। এই সংঘাতের শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এবং শান্তি আলোচনার উপর নির্ভর করতে হবে।