হিন্দু

হিন্দু শব্দটির উৎপত্তি ও অর্থ:

হিন্দু শব্দটি সিন্ধু নদীর নাম থেকে উদ্ভূত। প্রাথমিকভাবে এটি ভৌগোলিক পরিচয়বোধক ছিল, পরবর্তীতে ধর্মীয় পরিচয়বোধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ফার্সি ভাষায় "সিন্ধু" থেকে "হিন্দু" শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ ‘জলের একটি বৃহৎ অংশ’। গ্রন্থে প্রথম প্রয়োগ ১৪ শতকে।

হিন্দুধর্মের বিশ্বব্যাপী বিস্তার:

২০২৩ সালের হিসাবে, হিন্দুধর্ম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ভারতে সর্বাধিক হিন্দু বাস করে (প্রায় ১.১৫ বিলিয়ন)। পিউ রিসার্চ অনুসারে, বিশ্বে ১১৫ কোটিরও বেশি হিন্দু রয়েছে (বিশ্বের জনসংখ্যার ১৫.২%)। নেপাল, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বাস করে। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৪০ লাখেরও বেশি হিন্দু আছে।

ঐতিহাসিক নিপীড়ন ও ধর্মীয় সহিংসতা:

মধ্যযুগে এবং আধুনিক যুগে হিন্দুরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মুসলিম আক্রমণকারীদের হাতে লুণ্ঠন, হত্যা, মন্দির ধ্বংস, জোরপূর্বক ধর্মান্তরণের মত ঘটনা ঘটেছে। মুহাম্মদ বিন-কাসিম, গজনীর মাহমুদ, তৈমুর লং, আওরঙ্গজেব প্রমুখদের আমলে হিন্দুদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চলেছে। আধুনিক যুগেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দুরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রকাশনা:

রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নবগোপাল মিত্র, ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হিন্দু প্যাট্রিয়ট, হিন্দু মেলা, হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (RSS) হিন্দু সংস্কৃতি ও রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য সংগঠন। হিন্দু কলেজ বাংলার শিক্ষা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

হিন্দু আইন:

হিন্দু আইন দায়ভাগ ও মিতাক্ষরা দুটি ধারায় বিভক্ত। এটি বিবাহ, দত্তক গ্রহণ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তির বণ্টন প্রভৃতি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৫৫ সালে ভারতে নতুন বিবাহ আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৯৫৬ সালে সম্পত্তি উত্তরাধিকারে পুত্র-কন্যার সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পুরনো হিন্দু আইন কার্যকর রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • হিন্দুধর্ম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম
  • ভারতে সর্বাধিক হিন্দু বাস করে
  • মধ্যযুগে হিন্দুরা ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছে
  • হিন্দু প্যাট্রিয়ট, হিন্দু মেলা, হিন্দু মহাসভা গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সংগঠন
  • হিন্দু আইন দায়ভাগ ও মিতাক্ষরা দুটি ধারায় বিভক্ত