হিজলা উপজেলা: বরিশাল জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল হিজলা। ১৯১৭ সালের ১৫ই জুলাই প্রতিষ্ঠিত হিজলা উপজেলা ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ১৯১৮ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হিজলা থানার কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার আয়তন ৫১৫.৩৬ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ১,৫০,০০০ এর অধিক।
ভৌগোলিক অবস্থান: হিজলা উপজেলা বরিশাল জেলার উত্তরে অবস্থিত। উত্তরে শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট ও হাইমচর উপজেলা, দক্ষিণে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা এবং পশ্চিমে মুলাদী উপজেলা অবস্থিত। নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলটি জয়ন্তী, নয়াভাঙ্গা, মেঘনা, নিম্ন মেঘনা এবং আজিমপুর নদীর প্লাবিত এলাকা।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হিজলার ইতিহাস সমৃদ্ধ। ব্রিটিশ আমলে, নোয়াখালীর মাওলানা হাকিম আহসানউল্লাহ হিজলার গৌরাধী গ্রামে তালুক পেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হিজলায় বীর প্রতীক কাজী আনোয়ার হোসেন ও কুতুবউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধা চালানো হয়েছিল। এই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হিজলায় একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মিত। ১৮৯৯ সালে জমিদার বড়দাকান্ত মিত্র কাউরিয়া বাজারে ‘বাবুর বাড়ির মঠ’ নির্মাণ করেন, যা বরিশালের প্রাচীন স্থাপনা। ২০১৮ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।
অর্থনীতি: হিজলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, আখ, মাছ প্রধান কৃষি ফসল। অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরা, পশুপালন, এবং কুটিরশিল্প।
পরিবহন ও যোগাযোগ: হিজলায় পাকা, আধা-পাকা এবং কাঁচা রাস্তার জাল বিদ্যমান। নৌপথ যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: হিজলায় কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা বিদ্যমান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
উল্লেখযোগ্য স্থান: হিজলা উপজেলার উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে বাবুর বাড়ির মঠ (কাউরিয়া বাজার), মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, এবং নদীনালা।