হাজী সুয়াই মিয়া

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:০৯ পিএম

হাজী শরীয়তুল্লাহ ও দুদু মিয়া: ফরায়েজি আন্দোলনের দুই অগ্রদূত

ঊনবিংশ শতকের বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, জমিদারি শোষণ এবং ধর্মীয় অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে ফরায়েজি আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূলে ছিলেন দুই ব্যক্তিত্ব – হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং তার পুত্র মুহম্মদ মুহসিন উদ্দিন, যিনি ‘দুদু মিয়া’ নামে পরিচিত। তাদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়।

হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০): মাদারীপুরের চর শামাইলে জন্মগ্রহণকারী হাজী শরীয়তুল্লাহ বিশ বছর মক্কায় অবস্থান করেন। সেখানে ইসলামি শিক্ষায় পটু হয়ে তিনি বাংলায় ফিরে দেখতে পান মুসলমানদের মধ্যে কুসংস্কার ও ধর্মীয় অবক্ষয়। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামের প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করেন। ‘ফরায়েজি’ শব্দটি ‘ফরজ’ (অবশ্য কর্তব্য) থেকে উদ্ভূত, যারা ইসলামের ফরজ কাজগুলো পালন করে তাদেরকে ফরায়েজি বলা হয়। তিনি পাঁচ ওয়াজ, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজের উপর জোর দেন এবং কুসংস্কার ও অনাচার ত্যাগের আহ্বান জানান।

শুধুমাত্র ধর্মীয় সংস্কারেই সীমাবদ্ধ না থেকে, হাজী শরীয়তুল্লাহ জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন। তিনি প্রজাদের অবৈধ কর প্রদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষক, তাঁতী, তেলি প্রভৃতি শোষিত শ্রেণী ফরায়েজি আন্দোলনে যোগদান করে। ১৮৩৯ সালে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং ১৮৪০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২): হাজী শরীয়তুল্লাহর পুত্র দুদু মিয়া পিতার মৃত্যুর পর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন ছিলেন। তার নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন একটি সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়। তিনি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে জমিদার, নীলকর এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাধীন সরকার গঠন করে তিনি কৃষকদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় তাকে ইংরেজ সরকার গ্রেফতার করে। ১৮৬০ সালে মুক্তি পেয়ে ১৮৬২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ফরায়েজি আন্দোলনের গুরুত্ব: ফরায়েজি আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কার, কৃষকদের অধিকার আদায় এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এটি বাংলার মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে এবং সামাজিক-রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
  • তিনি ইসলামি শিক্ষায় পটু ছিলেন এবং ধর্মীয় সংস্কারের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।
  • দুদু মিয়া হাজী শরীয়তুল্লাহর পুত্র এবং ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা ছিলেন।
  • দুদু মিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন একটি সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়।
  • ফরায়েজি আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কার, কৃষক অধিকার ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - হাজী সুয়াই মিয়া

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হাজী সুয়াই মিয়া তার ছেলের কাছ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।