হাজারীবাগ: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও ব্যস্ততম এলাকা
ঢাকা মহানগরীর একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হল হাজারীবাগ। পুরান ঢাকার অংশ হলেও, বর্তমানে এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। ৩.৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই থানাটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিভাজনের পর হাজারীবাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে চলে আসে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
হাজারীবাগের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এটি দীর্ঘদিন ধরে চামড়া শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান আমলে এখানে ট্যানারি শিল্পের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে, এই শিল্প আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। তবে, ট্যানারির কারণে পরিবেশ দূষণের সমস্যা দেখা দেয়। এই কারণে ২০১৭ সালে সরকার হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করে। ট্যানারি স্থানান্তরের পর এই ভূমি পুনরুন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
হাজারীবাগের উত্তরে মোহাম্মদপুর, দক্ষিণে কামরাঙ্গীরচর, পূর্বে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট ও লালবাগ এবং পশ্চিমে কেরানীগঞ্জ অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০৩,৪৮২। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭,০৪৪ এবং মহিলা ৪৬,৪৩৮। ধর্মীয়ভাবে বেশিরভাগ বাসিন্দা মুসলমান।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
হাজারীবাগের অর্থনীতি ছোট ও বড় ব্যবসা, দোকানপাট, কারখানা, এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। অনেক মানুষ চাকরিজীবীও। স্থানান্তরিত ট্যানারি পল্লীর জমিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ চলছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
হাজারীবাগে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি, সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুকুলিকা শিক্ষালয়, হাজারীবাগ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, শেখ রাসেল সরকারী স্কুল, ফজিলতুন্নেছা সরকারী কলেজ, জাতীয় তরুণ সংঘ শিক্ষা নিকেতন এবং গজমহল ট্যানারী উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার কেন্দ্র আছে।
পরিবেশ:
পূর্বে ট্যানারির কারণে গুরুতর পরিবেশ দূষণের সমস্যা ছিল হাজারীবাগে। ট্যানারি স্থানান্তরের পরও এই দূষণের প্রভাব এখনও কিছুটা দেখা যায়। পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি:
লেখক ও নির্মাতা হামযা মুহাম্মদ হাবিব এই এলাকার বাসিন্দা।
উপসংহার:
হাজারীবাগ ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ঐতিহাসিক গুরুত্ব সহ এই এলাকা এখন আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পুনরুন্নয়ন কাজের মাধ্যমে এই এলাকার মান উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।