হবিগঞ্জ: সিলেট বিভাগের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হল হবিগঞ্জ। প্রশাসনিকভাবে এটি হবিগঞ্জ জেলার সদর ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সদর। খোয়াই নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পূর্ব নাম ছিল হাবিবগঞ্জ। প্রায় ২৩,৫৮,৮৮৬ জনের বসবাসকারী এই শহরের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৪°২৩′০২″ উত্তর ৯১°২৫′০১″ পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১২.৯২ মিটার।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ব্রিটিশ শাসনামলে হবিগঞ্জ মহকুমা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৮৭৪ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ নির্মাণ করে। ২০০৩ সালে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। জগৎজ্যোতি দাসসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখানে শহীদ হন। হবিগঞ্জে নবীগঞ্জ, মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বানিয়াচংয়ে গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যাগত তথ্য:
হবিগঞ্জ জেলার আয়তন ২৫৭৪.৭ বর্গ কিমি। উত্তরে সুনামগঞ্জ, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে মৌলভীবাজার ও সিলেট, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলায় বেষ্টিত। কুশিয়ারা, কালনী, খোয়াই, সুতাং, কোরাঙ্গী ও বরাক নদী হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হবিগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২০২৩৬০৩ জন।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
হবিগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আখ, আলু, পাট ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। শিক্ষার হার ৪০.৫%। জেলায় অনেক কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দর্শনীয় স্থান:
হবিগঞ্জে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। মহাকবি সৈয়দ সুলতানের সুলতানশী হাবেলী, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, বানিয়াচং রাজবাড়ি, চুনারুঘাট, মাধবপুরের চা বাগান ইত্যাদি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
উপসংহার:
ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর হবিগঞ্জ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ।