স্পেন জাতীয় ফুটবল দল (স্প্যানিশ: Selección Española de Fútbol) হল আন্তর্জাতিক পুরুষ ফুটবলে স্পেনের প্রতিনিধিত্বকারী দল। ১৯২০ সাল থেকে অংশগ্রহণ করে আসা এই দলটি রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (RFEF) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। স্পেন বিশ্বকাপে ১৬ বার অংশগ্রহণ করেছে, ২০০৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে এবং ১৯৭৮ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে বাছাইপর্ব উত্তীর্ণ হচ্ছে। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১২ বার অংশগ্রহণ করেছে, এবং ২০২৪ সালে চতুর্থবারের মত ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০২৩ সালের UEFA Nations League জয়ের পর, ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপ, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং Nations League-এর তিনটি মেজর টাইটেল জিতেছে। জার্মানির সাথে একমাত্র দল হিসেবে নারী এবং পুরুষ উভয় বিশ্বকাপেই জয়লাভ করেছে।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্পেনের অসাধারণ সাফল্যের জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ ও ভাষ্যকার এ সময়ের দলকে ইতিহাসের সেরা দলগুলির একটি হিসেবে বিবেচনা করেন। এই সময়কালে স্পেন ক্রমাগত তিনটি মেজর টাইটেল জেতে, যার মধ্যে দুটি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ (২০০৮ ও ২০১২) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, তারা ইউরোপের বাইরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ইউরোপীয় দল। এই সময়কালে (২০০৮-২০১৩) স্পেন FIFA Team of the Year পুরষ্কার জয় করে, যা ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক। ২০০৭ সালের শুরু থেকে ২০০৯ সালের FIFA Confederations Cup পর্যন্ত স্পেন ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত ছিল, যা ব্রাজিলের সাথে সমান এবং তখনকার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
স্পেন ১৯০৪ সাল থেকে FIFA-এর সদস্য, যদিও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। প্রথম স্পেন জাতীয় ফুটবল দল গঠিত হয় ১৯২০ সালে, ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। স্পেন তাদের অভিষেক ম্যাচে ২৮ আগস্ট ১৯২০-এ ডেনমার্ককে ১-০ গোলে হারিয়েছিল। ১৯৩৪ সালে প্রথম FIFA বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে, প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়েছিল কিন্তু কোয়ার্টার-ফাইনালে ইতালির কাছে হেরেছে। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৩৪ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে পারেনি। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান অর্জন করে।
১৯৬৪ সালে প্রথম মেজর টাইটেল জেতে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে ইউরোপীয় নেশন্স কাপ জয় করে। ১৯৮২ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে, ১৯৮৪ সালে ইউরো ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছিল। ২০০২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরেছিল। ২০০৮ ইউরো জিতেছিল, ২০০৯ FIFA Confederations Cup-এ তৃতীয় স্থান পেয়েছিল, ২০০৯-এ ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙেছিল। ২০১০ বিশ্বকাপ জিতেছিল, ২০২১ ইউরোর সেমি-ফাইনালে পৌঁছেছিল। ২০২২ বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে হেরে বাদ পড়েছিল। ২০২৪ ইউরোতে রেকর্ড চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
২০০৮ থেকে ২০১২ সালে ‘টিকি-টাকা’ নামে পরিচিত খেলার ধারায় সফলতা পেয়েছে। এই ধারা ছোট ছোট পাস, বল নিয়ন্ত্রণ ও দলগত একতায় নির্ভরশীল। এই খেলার ধারাটি ইউরো ২০০৮, ২০০৮ বিশ্বকাপ এবং ইউরো ২০১২ জয়ের সাথে জড়িত।
ঐতিহাসিকভাবে স্পেনের হোম কিট লাল জার্সি, হলুদ ট্রিম, গাঢ় নীল শর্টস এবং কালো মোজা। আধুনিক স্পেনের কিট Adidas দ্বারা তৈরি। স্পেনের কোন নির্দিষ্ট জাতীয় স্টেডিয়াম নেই; মাদ্রিদ, সেভিল, ভ্যালেন্সিয়া এবং বার্সেলোনায় বেশ কিছু স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলে।
স্পেনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির মধ্যে ইতালি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং জার্মানি উল্লেখযোগ্য। স্পেনের ম্যাচগুলি TVE এর La 1 চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়।
সার্জিও রামোস স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে (১৮০), ইকার ক্যাসিয়াস (১৬৭) এবং সার্জিও বুস্কেটস (১৪৩)। ডেভিড ভিয়া (৫৯) স্পেনের সর্বোচ্চ গোলদাতা। রাউল গোনজালেজ (৪৪) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।