স্থানীয় সালিশ: বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিচার ব্যবস্থা। এটি মূলত ছোটখাটো বিরোধ-বিবাদের অ্যানুষ্ঠানিক সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত গ্রামের মাতব্বর, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, পঞ্চায়েত সদস্য, বা ধর্মীয় নেতারা মিলে সালিশের কাজ পরিচালনা করেন। সালিশের উদ্দেশ্য হল দ্বন্দ্বের পক্ষগুলোর মধ্যে আপোষ ও সমঝোতা স্থাপন করে শান্তি বজায় রাখা।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে সালিশ প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে আনুষ্ঠানিক আদালতের প্রসারের সাথে সাথে সালিশের প্রভাব কিছুটা কমে যায়। তবুও, অনেক গ্রামে সালিশের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ও সালিশ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে, যা গ্রামীণ আদালতকে বিবাহ, পারিবারিক বিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর করার ক্ষমতা দিয়েছিল। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সালিশকে আনুষ্ঠানিকতা দেওয়া হয়।
কার্যপ্রণালী: সাধারণত সালিশের মাধ্যমে বিরোধের উভয় পক্ষকে ডেকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সালিশকারীরা উভয় পক্ষের মতামত শুনে একটি আপোষমূলক সমাধানের সন্ধান করে। সালিশের রায় সাধারণত বাধ্যতামূলক নয়, তবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে তা গ্রহণ করা হয়।
সালিশের গুরুত্ব ও প্রভাব: সালিশ গ্রামীণ সমাজে শান্তি বজায় রাখা এবং দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি আনুষ্ঠানিক আদালতের চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং দ্রুত। তবে, কখনো কখনো স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা সালিশ ব্যবস্থার অপব্যবহারের ঘটনাও ঘটে। অন্যায় আচরণ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সালিশের কার্যকারিতাকে ক্ষুন্ন করে।
বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে বাংলাদেশে সালিশের প্রচলন এখনও বিদ্যমান, কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) এবং অন্যান্য বেসরকারি সংগঠন সালিশের কার্যক্রম উন্নত করতে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। তারা সালিশকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে। সালিশের ভবিষ্যৎ এর কার্যকারিতা উন্নয়নের উপর নির্ভর করবে।