সুরাইয়া: একজন কিংবদন্তী অভিনেত্রী ও গায়িকার জীবনকাহিনী
সুরাইয়া জামাল শেখ, ছদ্মনামে সুরাইয়া (ইংরেজি: Suraiya Jamaal Sheikh), (জন্ম: ১৫ জুন ১৯২৯ - মৃত্যু: ৩১ জানুয়ারি ২০০৪) ছিলেন ২০শ শতকের ৪০ এবং ৫০-এর দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী ও প্লেব্যাক গায়িকা। তিনি উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এবং 'মালিকা-ই-তাবাসসুম' (Urdu: ملکہ ترنم, English: the queen of melody) খেতাব পেয়েছিলেন। পরে তাঁকে 'নূর জিহান' নামেও ডাকা হত।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
সুরাইয়া পাঞ্জাবের গুজরাওয়ালার এক ছোট ফার্নিচার ব্যবসায়ীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার লাহোরে চলে যায়। এক বছর বয়সে তারা বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) স্থানান্তরিত হয় এবং মেরিন ড্রাইভের কৃষ্ণ মহলে বসবাস শুরু করে। তিনি জে.বি. পেটিট হাই স্কুল ফর গার্লসে পড়াশোনা করেন। তার পরিবার ছিল গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবার। তার মাতামহ, বাদশাহ বেগম, তাকে ফার্সিতে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে শিশুদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতের সাথে জড়িত হন। তার বাল্যবন্ধুদের মধ্যে রাজ কাপুর এবং মদন মোহন উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্র জীবন:
সুরাইয়া ১৯৩৬ সালে জাদ্দানবাই পরিচালিত 'ম্যাডাম ফ্যাশন' ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৪১ সালে 'তাজমহল' ছবিতে মুমতাজ মহলের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে অভিনয় জীবনে পদার্পণ করেন। তারপর ৭০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় এবং ৩৩৮টি গান গেয়েছেন। ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে 'বিদ্যা', 'প্রেম কি জিৎ', 'দিল্লাগি' ও 'বড়ি বোহেন' ছবির অভূতপূর্ব সাফল্য তার জীবনে এক নতুন মোড় নিয়ে আসে। 'মিরজা গালিব' (১৯৫৪) ছবিতে মোতি বেগমের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন এবং ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীও তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ইশারা (১৯৪৩), তদবির (১৯৪৩), ফুল (১৯৪৫), অনমোল ঘড়ি (১৯৪৬), ওমর খৈয়াম (১৯৪৬), পারওয়ানা (১৯৪৭), দর্দ (১৯৪৭), শায়ের (১৯৪৯), দস্তান (১৯৫০), আফসার (১৯৫০), দিওয়ানা (১৯৫২), বিল্বমঙ্গল (১৯৫৪) এবং মিস্টার লাম্বু (১৯৫৬) । ১৯৬৩ সালে 'রুস্তম সোহরাবে' অভিনয় করে তিনি চলচ্চিত্র জীবন থেকে অবসর নেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
সুরাইয়া দেব আনন্দের সাথে গভীর ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ছয়টি ছবিতে একসাথে কাজ করেছেন। কিন্তু পারিবারিক বাধার কারণে তাদের বিবাহ হয়নি। সুরাইয়া তার জীবনে অবিবাহিতই ছিলেন।
মৃত্যু:
২০০৪ সালে ৭৪ বছর বয়সে ক্যান্সারে মুম্বাইতে মারা যান সুরাইয়া।
সম্মাননা:
১৯৯৬ সালে 'স্ক্রিন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' এবং ১৯৯৯ সালে 'বিমল রায় মেমোরিয়াল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছেন। ২০০৩ সালে দাদাসাহেব ফাল্কে একাডেমি ও স্ক্রীন ওয়ার্ল্ড পাবলিকেশন কর্তৃক সম্মানিত হন। ২০১৩ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষ উপলক্ষে তার ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।
সুরাইয়া: কিংবদন্তী গায়িকা ও অভিনেত্রী