সিলেট: উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শহর। ২০০৯ সালে এটি মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা পায়। সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। সিলেটের অর্থনীতি প্রাকৃতিক সম্পদ, চা, গ্যাস ও পাথরের উপর নির্ভরশীল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলার মধ্যে একটি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সিলেটিরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ঐতিহাসিকভাবে, সিলেটকে শ্রীহট্ট নামেও ডাকা হতো। এর নামকরণের পেছনে কয়েকটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তী অনুসারে, হযরত শাহ জালালের আগমনের পর ‘শিল হট্’ (পাথরের হাট) থেকে ‘সিলেট’ নামকরণ হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে হযরত শাহ জালালের আগমনের সাথে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। হযরত শাহ জালাল ও হযরত শাহ পরানের মাজার শরীফ সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান।
ব্রিটিশ শাসনামলে সিলেট আসামের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালের গণভোটের মাধ্যমে সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সাথে যোগদান করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সিলেটের জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষাধারী। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম চলে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সিলেট মহানগরীর জনসংখ্যা ছিল ৫,৩১,৬৬৩ জন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন শহরের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে।
শিক্ষার দিক থেকে সিলেটের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। এখানে রয়েছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সিলেটের উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান এবং ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। ঢাকা থেকে সিলেটে রেল, বাস এবং বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর।
সিলেটের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এই শহরটি তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত।