সিগারেট: এক অভিশাপের ইতিহাস ও বর্তমান
সিগারেট, তামাকের একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, যা ধূমপানের মাধ্যমে সেবন করা হয়। তামাক পাতা কুচি করে কেটে, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে, কাগজে মোড়ানো একটি সিলিন্ডারাকার বস্তু। ১২০ মিলিমিটার লম্বা ও ১০ মিলিমিটার ব্যাসের এই সিলিন্ডারের এক প্রান্তে আগুন জ্বালিয়ে অন্য প্রান্তে মুখ দিয়ে ধোঁয়া শ্বাসে নিতে হয়। একটি স্ট্যান্ডার্ড সিগারেটে ৫৭ টির ও বেশি মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ইতিহাস:
মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায় ৯ম শতাব্দীতে তামাক সেবনের প্রাচীন প্রমাণ পাওয়া গেছে। মায়া ও আজটেকরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তামাক সেবন করত। ১৭শ শতকে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে 'সিগারেট' নামে পরিচিত হয়। ১৮৪৭ সালে মেক্সিকোর জুয়ান নেপোমুসেনো অ্যাডোর্নো প্রথম সিগারেট তৈরির যন্ত্রের পেটেন্ট করেন। ১৮৮০ সালে জেমস আলবার্ট বনস্যাকের আবিষ্কারের ফলে সিগারেট উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিংশ শতাব্দীতে সিগারেটের ব্যবহার পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সৈন্যদের কাছে সিগারেট সরবরাহ করা হত।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
সিগারেটে নিকোটিন নামক একটি উদ্দীপক পদার্থ থাকে, যা অত্যন্ত নেশাজনক। সিগারেট ধূমপান ক্যান্সার, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ সহ অনেক রোগের কারণ হতে পারে। ধূমপানের ফলে হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায়, রক্তনালী সরু হয়ে যায় ও রক্তে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের ধূমপান গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ধূমপানের কারণে কোটি কোটি মানুষ মারা যায়।
সরকারি নিয়ন্ত্রণ:
ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাবের কারণে অনেক দেশে সরকার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ করে। এতে ধূমপান নিষিদ্ধ এলাকা, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, তামাকের বিক্রয় সীমাবদ্ধ করার মতো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। সিগারেট প্যাকেটে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে চিত্রসহ সতর্কবার্তা দেওয়া ও বিজ্ঞাপন প্রচারণা সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। কিছু দেশে সিগারেটের বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে অথবা করা হচ্ছে।
বিকল্প:
সাম্প্রতিক কালে ইলেকট্রনিক সিগারেট (ই-সিগারেট) একটি বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। যদিও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো স্পষ্ট নেই, তবে এটি ঐতিহ্যগত সিগারেট তুলনায় কম ক্ষতিকারক হতে পারে বলে মনে করা হয়।
উপসংহার:
সিগারেট ধূমপান মানব জীবনের জন্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরী। সরকারের পক্ষ থেকে ধূমপান বিরোধী পদক্ষেপ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন এবং জনসাধারণের মধ্যে ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।